৮ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ৪:২৪

মানুষের দুর্ভোগ, ফসলের ক্ষতি

 

সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে বৃস্পতিবার দেশের ১৭ জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারা দিন সূর্যের মুখও দেখা যায়নি। আজও কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

ভারতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টির কারণেই সৃষ্ট মেঘমালা থেকেই এই বৃষ্টিপাত। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম মঙ্গলবার ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানে। এর প্রভাবে বুধবার রাতেই বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে। সেখানে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ সময়ে ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পণ্য পরিবহণেও ভোগান্তি ছিল। দৈনন্দিন বাজারে তেমন ক্রেতা ছিল না। সপ্তাহের শেষদিন হওয়ায় রাজধানীতে ব্যাপক যানজট হয়।

ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, গুলিস্তান, কাওরান বাজার এবং মগবাজারে বিকালে যানজটে মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সময়ে গণপরিবহণগুলোতেও ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মতিঝিল থেকে মিরপুরগামী যাত্রী আফজাল হোসেন জানান, মিরপুর শাহ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মার্কেটে দোকান রয়েছে তার। জরুরি কাজে সকালে মতিঝিলে এসে ভোগান্তিতে পড়েন তিনি।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার বৃষ্টিসহ ভোলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ৩ দিন ধরে এমন অবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টি ও মেঘ থাকায় তাদের ধান পোকায় কাটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের রবিশস্য ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে এ অঞ্চলে প্রায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমির ধান মাটির সঙ্গে হেলে যায়। খেতগুলোতে জলাবদ্ধতা কাটেনি ১৭ দিনেও।

জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ওয়ারিসুলুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ হাজার হেক্টর জমির শস্য নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া রবিশস্যের মধ্যে সরিষা, গম ও ডাল চাষের ৫০ ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ধকল কাটিয়ে ওঠতে না ওঠতেই ঘূর্ণিঝড় মিগজাউসের প্রভাবে মেঘ ও গুঁড়ি বৃষ্টিতে ফের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। মিথিলির সময় যেসব খেতের রবিশস্য নষ্ট হয়েছে সেখানে নতুন করে চাষের প্রস্তুতির মুহূর্তেই আবার বৃষ্টি হলো।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, এদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে নীলফামারী। সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার কারণে ৬ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমান চলাচল। এর আগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটার আগ পর্যন্ত বিমান অবতরণ ও উড্ডয়ন বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারের ৬টি বিমানে ঢাকাগামী চার শতাধিক যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন।

স্থানীয় আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, নীলফামারীতে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রার পারদ কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের মধ্যে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত দিনের চেয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে।

শহরের রিকশাচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, বুধবার বিকাল থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সারা দিনই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি কোথাও।

সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে। দেখা যায়নি সূর্য। নগরের রাস্তাঘাটে চলাচল এবং দোকানপাটে মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। পথচারীদের বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা ছাতা নিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েন চাকরিজীবীরা।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের ১৭টি জেলায় বৃষ্টিপাত হয়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/748824