৭ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৫১

আতঙ্কে বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা

সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ৫০০

 

এজেন্সি প্রতি এক লাফে পাঁচ গুণ হাজী বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। আগে এজেন্সিগুলোর সরাসরি সর্বনিম্ন ১০০ হাজী পাঠানোর সুযোগ থাকলেও আগামী বছর প্রতি এজেন্সিকে সর্বনিম্ন ৫০০ হাজী পাঠাতে হবে। পরের বছর সর্বনিম্ন এক হাজার এবং তার পরের বছর সর্বনিম্ন দুই হাজার হাজী পাঠাতে হবে। এতে হাজীদের সেবার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা। তারা মনে করছেন যেখানে মাত্র ১০০ হাজী সংগ্রহ করতেই বেশির ভাগ হজ এজেন্সির হিমশিম খেতে হয় সেখানে ৫০০ হাজী সংগ্রহ ও ভালো সেবা দেয়া প্রায় অসম্ভব। তারা আগের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।

 

গত বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেন। মোট ৬০৩টি বেসরকারি এজেন্সি হাজীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিতব্য হজের জন্যও বাংলাদেশের কোটা রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এ জন্য ইতোমধ্যে দুই দফায় ৮৬৯টি এজেন্সিকে হজযাত্রী সংগ্রহ ও পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে শুরুর পর গত ২০ দিনে মাত্র দুই হাজার ৩৩০ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে মাত্র ৬১৯ জন এবং বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন এক হাজার ৭১১ জন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ছয় শতাধিক এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীদের সেবা দেয়া হলেও এ বছর হঠাৎ করেই গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি সরকার বাংলাদেশকে মাত্র ৫৬টি এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য চিঠি দেয়। এরপর বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের পক্ষ থেকে আগের নিয়ম বহাল রাখার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করতে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিগত সময়ে একটি এজেন্সি থেকে সর্বনিম্ন ১০০ হজযাত্রী পাঠানো হয়েছে। আর সর্বোচ্চ হাজী পাঠানো হয় ৩০০ জন। ফলে একটি এজেন্সির পক্ষে এত বেশিসংখ্যক হাজীর সেবা দেয়া খুবই কষ্টকর ও প্রায় অসম্ভব হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি জানিয়ে গত ৫ অক্টোবর সৌদি সরকারকে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার গত ২০ নভেম্বর ৫৬ এজেন্সির পরিবর্তে আগামী বছর প্রতিটি হজ এজেন্সির জন্য সর্বনিম্ন ৫০০ হাজী পাঠানো, তার পরের বছর ২০২৫ সালে সর্বনিম্ন এক হাজার এবং ২০২৬ সালে সর্বনিম্ন দুই হাজার হাজী পাঠানোর নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি সরকারের এ সিদ্ধান্ত হাবকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সর্বনিম্ন ৫০০ হাজী পাঠানোর বিষয়টি মানতে নারাজ বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। তারা বলছেন একটি এজেন্সির পক্ষে এতসংখ্যক হাজী সংগ্রহ ও সেবা দেয়া প্রায় অসম্ভব।

বেসরকারি এজেন্সি আল নাফি ট্র্যাভেলসের মালিক নাজিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে সর্বনিম্ন কোটা ছিল ১০০ জন। এ সংখ্যাও অনেক এজেন্সি পূরণ করতে পারত না। ৬০-৭০ জন হাজী সংগ্রহের পর তারা অন্য লিড এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীদের পাঠাত। কিন্তু এভাবে সর্বনিম্ন ৫০০ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করার কথা বললে অনেক এজেন্সি পারবে না এবং বহু এজেন্সি বন্ধ হয়ে পথে বসবে। অল্প কয়েকটি এজেন্সি সিন্ডিকেট করে হজযাত্রী পাঠাবে। এতে হজযাত্রীদের সেবার মান তলানিতে নামবে। তিনি বলেন, এ নিয়মের কারণে এজেন্সি মালিকরা এখন আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি আগের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানান।

বেসরকারি এজেন্সি ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাওলানা মাহমুদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। একটি এজেন্সির পক্ষে সর্বনিম্ন ৫০০ হজযাত্রী সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। হাজীরাও ভালো সেবা পাবে না।

বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে বেসরকারি হজ এজেন্সিদের নিয়ে জরুরি মতবিনিময় সভা করে হাব। এরপর নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেও এ নিয়মের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে হাব। এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তারা আগের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে। হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সর্বনিম্ন ৫০০ হাজী হলে এজেন্সির পক্ষে ভালো সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। বেশির ভাগ এজেন্সির পক্ষে এত হাজী সংগ্রহ করাও কষ্টকর হবে। এ জন্য আমরা আগের সর্বনিম্ন ১০০ হাজী বহাল রাখার দাবি জানিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু আ হামিদ জমাদ্দার নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ঢাকার রাজকীয় সৌদি দূতাবাস থেকে একটি চিঠি পাওয়া যায়। এতে ২০২৪ সালের হজে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৫৬টি এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে বাংলাদেশের এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য হজ এজেন্সির সংখ্যা বাড়াতে সৌদি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠিতে ২০২৩ সালের হজ কার্যক্রমে বাংলাদেশের ৬০৩টি হজ এজেন্সি অংশ নিয়েছিল বলেও জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. তৌফিক বিন ফাওজান আল রাবিয়াহর গত ২২ থেকে ২৪ আগস্ট এবং পরবর্তীতে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন চার সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে সফরে এলে তাদের কাছে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পাঠানো সব এজেন্সিকে হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে গত ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভায় কাউন্সেলর (হজ) সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশের সব হজ এজেন্সিকে ২০২৪ সালের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর এক চিঠিতে রাজকীয় সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ঢাকার রাজকীয় সৌদি দূতাবাস আগামী বছর হজযাত্রী পাঠাতে সর্বনিম্ন ৫০০ জনের কোটার বিষয়টি অবহিত করে। সাথে আগামী দুই বছর আরো বাড়ানোর কথা জানানো হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে সৌদি সরকারের সাথে এখনো আলোচনা চলছে। তবে আমি মনে করি এ সংখ্যা কোনো অস্বাভাবিক নয়। ভারত যদি সব হাজীকে সরকারিভাবে পাঠাতে পারে, তাহলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমাদেরও সরকারিভাবে সব হাজীকে পাঠানোর সামর্থ্য আছে। আর আমাদের এজেন্সিরা বর্তমানে যে কমসংখ্যক হজযাত্রী পাঠায় তাতে সব এজেন্সি কি সঠিকভাবে সেবা দেয়?

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সালের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটার মধ্যে সরকারিভাবে ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটায় এক লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/796948