৭ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:৪৯

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপদ্ধতি জানে না শিক্ষার্থীরা

এ বছর হচ্ছে না একক পরীক্ষা

 

এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ হওয়ার পর এখনো উচ্চ শিক্ষা অর্জনের বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তির নির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন পাচ্ছে না ভর্তি ইচ্ছুকরা। এ অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরেও সাড়ে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী তাদের গন্তব্য নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না। বিশেষ করে গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও কৃষিগুচ্ছের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটিয়ে এবার গুচ্ছপদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ দিকে অন্যান্য বছর গুচ্ছে অন্তর্ভুুক্ত থাকলেও এবার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হতে চাইছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে চলতি থেকে একক পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটিও ঝুলে গেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতি এখনো অজানা সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থীর। এ দিকে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলেও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সূত্র মতে, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যুদ্ধ। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সভা ডেকেছে। তবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মতো এবারো ২২টি সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের মত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে যেতে নারাজ। গত শিক্ষাবর্ষের মতো এবারো তারা গুচ্ছে না থাকার পক্ষে মতামত জানিয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি কবে আয়োজন করা হবে তা এখনো আলোচনা হয়নি। তবে আগামী মার্চের শেষ দিকে অথবা এপ্রিল মাসের শুরুতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে চায়। এই অবস্থায় গুচ্ছ থাকবে কি না সেটি নিয়েই যত আলোচনা। গুচ্ছ থাকলে মার্চ অথবা এপ্রিলে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা কবে আয়োজন করা হবে তা নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা হলে তখন জানানো যাবে।

ইউজিসি বলছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি কমেছে। একই সাথে খরচও কমেছে। শিক্ষার্থীরা মাত্র একবার আবেদন ফি দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা নিজ জেলায় ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এই পদ্ধতি কোনো ক্রমেই বাতিল করা যাবে না। এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুসারে ইউজিসি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ বিষয়ে কমিটি করে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছিল; কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষে সেটি কার্যকর হচ্ছে না। একক ভর্তি পরীক্ষা না হলেও গত বছরের মতো আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকরা ইতোমধ্যে গুচ্ছের বিপক্ষে মত দিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আসলাম আলী বলেন, সমিতির সাধারণ সভায় মতামত এসেছে, গুচ্ছতে থাকলে আমাদের স্বকীয়তা নষ্ট হয়। আমরা ঠিক সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করতে পারি না। অধিকাংশ শিক্ষক মতামত দিয়েছেন আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে, সঠিক সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করতে গুচ্ছ থেকে বের হতে হবে।

অন্য দিকে আগের ঘোষণা মতে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছিল ইউজিসি। তবে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি এ উদ্যোগ। একই সাথে সরকারের নানামুখী ব্যস্ততায় একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থাকার পর এবার গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়েও নতুন করে এখন বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছে থাকা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ আকারে না নেয়ার পক্ষে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ। গত বছরও তারা এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। এবারো একই মনোভাব দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থাকবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ভিসি জানান, গুচ্ছ পরীক্ষা হলে একজন শিক্ষার্থীর সুযোগ নষ্ট হয়। একটি পরীক্ষা খারাপ হলে আর ভর্তির সুযোগ থাকে না। অথচ সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলে সে পছন্দেমতো পরীক্ষা দিতে পারে। তবে শিক্ষকরা চাইলে আগের নিয়মে পরীক্ষা হতে পারে। কারণ এখানে ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয় না।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের সব বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন পরীক্ষার্থী।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/796961