৬ ডিসেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৯:২১

শিক্ষায় মন নেই কারো রুটিন কাজেও উদাসীন

পিছিয়ে যাচ্ছে স্কুলের বই উৎসব; একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও শঙ্কা

শিক্ষাকার্যক্রম তদারকিতে এখন মন নেই কারো। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে। সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা জনমতকে পাশ কাটিয়ে একতরফা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষার নিয়মিত রুটিন কাজে উদাসীনতা বেড়েছে। আসন্ন শিক্ষাবর্ষের নানামুখী কর্মকাণ্ড এখনি শুরু করার কথা থাকলেও বেশ কিছু কাজে চলছে ধীর গতি। ফলে শঙ্কায় রয়েছে দেশের কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নতুন শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত রুটিন কাজ হচ্ছে বছরের শুরুর দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেয়া। দীর্ঘ দিন থেকে এই রেওয়াজ চালু থাকলে এবারই প্রথম নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে নতুন বই পাবে না শিক্ষার্থীরা। তদারকি না থাকায় এবং সময়মতো বই মুদ্রণের কার্যাদেশ না দিতে পারায় এ বছর নির্ধারিত দিনে বই পাবে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনিও এ বিষয়ে তার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ২০২৪ সালে নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রতি বছরের মতো বই উৎসব না-ও হতে পারে। বই মুদ্রণ ও বিপণন সংক্রান্ত কাজে কিছু জটিলতা থাকায় এ বছর বই পেতে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দিন বেশি অপেক্ষা করতে হতে পারে।

 

অন্য দিকে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থাকলেও প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় একক ভর্তি পরীক্ষাও আর হচ্ছে না। ফলে আগামীতে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত আসবে বলে সূত্র জানিয়েছে। অতীতে সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এ বছরই প্রথম নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যস্ততার কারণে এইচএসসি ও সমমানের ফল সকালে ঘোষণা করার পর বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এটা অনেকটা গাড়ির আগে ঘোড়া জুড়ে দেয়ার মতো। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। তবে জানা গেছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যস্ততা থাকায় গত ২৬ নভেম্বর সবার পরিবর্তে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। যদিও ওই দিন সকালেই শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হাতে ফলাফল চলে যায়। পরে বেলা আড়াইটায় সংবাদ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

এ দিকে আগের ঘোষণা মতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছিল ইউজিসি। তবে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি এ উদ্যোগ। একই সাথে সরকারের নানামুখী ব্যস্ততায় একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থাকার পর এবার গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়েও নতুন করে এখন বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আট বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গুচ্ছ থাকা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ আকারে না নেয়ার পক্ষে শিক্ষকদের বড় একটি অংশ। গত বছরও তারা এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। এবারো একই মনোভাব দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ গুচ্ছের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে কৃষি গুচ্ছ থাকবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকরা ইতোমধ্যে গুচ্ছের বিপক্ষে মত দিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আসলাম আলী বলেন, সমিতির সাধারণ সভায় মতামত এসেছে, গুচ্ছতে থাকলে আমাদের স্বকীয়তা নষ্ট হয়। আমরা ঠিক সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করতে পারি না। বেশির ভাগ শিক্ষক মতামত দিয়েছেন আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে, সঠিক সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু করতে গুচ্ছ থেকে বের হতে হবে।

তিনি বলেন, গুচ্ছ থেকে যদি বের হতেই হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় কোন পদ্ধতিতে এগোচ্ছে, আমাদেরও সে পদ্ধতিতে এগোতে হবে। গুচ্ছ থেকে বের হওয়া একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমরা এ মতামত উপাচার্যকে অবহিত করেছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো: মিজানুর রহমান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে গুচ্ছের বিপক্ষে। তবে কর্তৃপক্ষ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই পরীক্ষা হবে।

তিনি বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষা হলে একজন শিক্ষার্থীর সুযোগ নষ্ট হয়। একটি পরীক্ষা খারাপ হলে আর ভর্তির সুযোগ থাকে না। অথচ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলে সে পছন্দমতো পরীক্ষা দিতে পারে। শেকৃবি শিক্ষকরা চাইলে আগের নিয়মে পরীক্ষা হতে পারে। কারণ এখানে ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয় না।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একক পরীক্ষার বিষয়েও দ্বেতমত তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউজিসির কাছে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাব চাওয়া হলেও অধ্যাদেশের খসড়া পাঠিয়েছিল, যা গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদ অধিবেশন না থাকলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থায় অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু এখন দেশে জরুরি অবস্থা নেই। সে জন্য অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বিষয়ে গত মাসের শেষে ইউজিসিতে আয়োজিত এক কর্মশালায় একক ভর্তি পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। একদিন পরে ইউজিসিতে এক সভায় তিনি বলেন, গত বছরের মতো আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/796711