২৩ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৮:১০

সীমার বাইরে ঋণ বিতরণ, প্রভিশন ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি

 

ফাইল ছবিসুশাসন ও করপোরেট সংস্কৃতির অভাবে অনেক ব্যাংক ঋণ বিতরণে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাংক নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সীমার বাইরে ঋণ বিতরণ করেছে। এতে অনেক ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত তারল্য না থাকায় বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে পারছে না ৯টি ব্যাংক। ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের পক্ষে কথা রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ৯টি ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, যা গত সেপ্টেস্বর প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এসে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে হয়েছে ২৮ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে তারল্য ঘাটতিতে থাকা বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। খেলাপিসহ অন্যান্য ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১৫ হাজার ৬৮১ কোটি ৮১ লাখ। কিন্তু ব্যাংকটি ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঘাটতিতে পড়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১৯৮ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫৪২ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৩৯৯ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৩৩৫ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২৩৪ কোটি এবং মধুমতি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৯০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া খেলাপি ঋণের হিসাব আইএমএফ গ্রহণ করে না। তার মানে এ হিসাবের চেয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের মাত্রা অনেক বেশি। এখানে পুনঃ তফসিল করা ঋণের হিসাব নেই। আদালতে বিচারাধীন খেলাপির হিসাব নেই। প্রকৃত হিসাব আসলে খেলাপির সংখ্যা বেড়ে যেত। এখানে বড় আপত্তির জায়গাটা হলো হিসাবে গরমিল। এসব ব্যাংকের গ্রাহকের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণ ১৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ক্যাটাগরি ভিত্তিতে ঋণের মান অনুযায়ী নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়।

https://www.ajkerpatrika.com/304290