২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৭:৩২

মসুর ডালের দাম আবারও চড়া

দেড় মাসে বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ২০ টাকা

 

চলতি মাসের শুরুতে মসুর ডালের দাম কেজিতে থেকে ১০ টাকা বেড়েছিল। মাঝে কয়েক দিন কমে আবার বেড়েছে খাদ্যপণ্যটির দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই-তিন দিন ধরে পাইকারি পর্যায়ে বস্তায় (২৫ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। আর আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। এতে আমদানি কমেছে, কিছুটা সংকটও তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দামে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুল বাজার থেকে ১১৫ টাকা দরে বড় দানার মসুর ডাল কেনেন একটি সরকারি কলেজের ছাত্র জিসান হাসান। সমকালকে তিনি বলেন, মেসে প্রতিদিনই ডাল রান্না হয়। আলু ভর্তা হয় সকালে। কিন্তু এখন আলুর দাম বেশি, ডালের দামও বেড়েছে। এতে মেসে খাওয়ার খরচ বেড়েছে।

নভেম্বরের শুরুতে বড় দানার মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকার আশপাশে এবং ছোট দানার মসুর ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এরপর সপ্তাহ দুয়েক কেজিতে ১০ টাকা কমেছিল। তবে দু’দিন ধরে আবার দাম বেড়ে বর্তমানে বড় দানার ডালের কেজি ১১০ থেকে ১২০ এবং ছোট দানার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক-দেড় মাস আগে বড় দানার মসুর ১০০ এবং ছোট দানার ডাল ১৩০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে দেড় মাসের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ ও ১০ থেকে ১৫ টাকা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে দু’দিন ধরে মোটা দানার মসুর ডালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকার আশপাশে। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে চলতি সপ্তাহে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা। তবে এক সপ্তাহ আগে যেসব ব্যবসায়ী ডাল কিনে রেখেছেন, তারা কিছুটা কম দরে বিক্রি করছেন।

মসুরের পাশাপাশি অন্য ডালের দামও চড়া। মাসখানেক ধরে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অ্যাংকর ও খেসারি ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৭০ থেকে ৭৫ এবং ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। 

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের লিটন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মাকসুদ আলম লিটন সমকালকে বলেন, মাসখানেক আগে বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। পাইকারি বাজারে কয়েক দিন ধরে দাম বাড়ার কারণে এখন কেজি ১১৫ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না। 

কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি দাম বাড়ার কারণে দু’দিন ধরে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মোটা মসুর ডাল। আর ক্যাঙ্গারু (ছোট দানা) বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।

তবে মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আল-আমীন বলেন, আট-দশ দিন আগে কম দরে ডাল কেনা আছে। ফলে তিনি বড় দানার মসুর ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর ছোট দানার ডালের দাম রাখছেন ১৪০ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশে বছরে ডালের চাহিদা প্রায় ২৮ লাখ টন। এর মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ৯ থেকে ১০ লাখ টন। ফলে প্রতি বছর ১৮ থেকে ১৯ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়, যার বেশির ভাগই মসুর ডাল ও ছোলা। এসব ডালের সিংহভাগ আমদানি করা হয় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ডালের দাম বাড়ার মূল কারণ ডলারের সংকট ও দাম বৃদ্ধি। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছে না আমদানিকারকরা। এতে আমদানি কমেছে, যার প্রভাবে দাম বেড়েছে।

তবে অন্য পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই হারে ডালের দাম বাড়েনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাজারে ডালের কিছুটা সংকট রয়েছে। তবে আগের তুলনায় মানুষ ডাল কম কিনছেন। না হলে এই সংকটের সময় দাম আরও বাড়ত। 

 

https://www.samakal.com/economics/article/208802