২২ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৭:২৯

বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ, সুদও দ্বিগুণ

বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ক্রমাগত বাড়ছে সরকারে ঋণ পরিশোধের চাপ। এক বছরের ব্যবধানে পরিশোধের পরিমাণ হয়েছে দ্বিগুণ, একই সঙ্গে সুদ পরিশোধও দ্বিগুণের বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই- অক্টোবর) বাংলাদেশ ঋণের বিপরীতে পরিশোধ করেছে ১২ হাজার ৮৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১১১ টাকা দরে)। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করেছে ছয় হাজার ৯০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের চার মাসে সুদ বাবদ পরিশোধ পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চার মাসে সুদ বাবদ পরিশোধ ছিল এক হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সুদ পরিশোধ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। একই সময়ে কমেছে অর্থছাড়ও।

চলতি অর্থবছরের চার মাসে মোট বৈদেশিক ঋণছাড় হয়েছে ১৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ২১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ছাড় কমেছে তিন হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে।

তা ছাড়া ঋণ পরিশোধে আরো বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

ইআরডির তথ্য বলছে, অর্থছাড় কমলেও বেড়েছে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ। গত অর্থবছরের এই সময়ে যেখানে ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল, এবার সেখানে ৩৬২ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য মতে, চার মাসে সবচেয়ে বেশি ৫১ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণছাড় করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৩৩ কোটি ডলার।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ছাড় করেছে ২৯ কোটি ডলার। রাশিয়া ছাড় করেছে ২৬ কোটি ডলার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড় করেছে ৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার, আর চীন ছাড় করেছে তিন কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা ৯ কোটি ডলার ছাড় করেছে।

এদিকে গত চার মাসে সবচেয়ে বেশি ১৫০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাইকা। এডিবি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১০৩ কোটি ডলারের। বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০ কোটি ডলারের। আরো কয়েকটি দেশ ৭৯ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ভারত ও চীনের মধ্যে কেউই গত চার মাসে নতুন করে বৈদেশিক ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।

এর আগে নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে (জুলাই- আগস্ট) দুই মাসে বৈদেশিক অর্থ সহায়তা কমেছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। প্রতি ডলার ১১০.৫০ পয়সা মূল্য ধরলে তা দাঁড়ায় এক হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কম। এই দুই মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তা ছাড়া ঋণ পরিশোধে আরো বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা।

https://www.kalerkantho.com/online/business/2023/11/22/1338568