৭ মে ২০১৭, রবিবার, ১০:৩৬

অর্থ বছরের দশ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে দুইশ’ কোটি টাকা

চলতি অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। আগের অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের এই সময়ে এই হার ১৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্সের এই ক্রমহ্রাসমান গতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ অর্থমন্ত্রী নিজেই। তিনি কারণ অনুসন্ধানের জন্য বরাবরের মতো নির্দেশও দিয়েছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স-এর গতি প্রকৃতি নিয়ে তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে এপ্রিল মাসে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কিছু বাড়লেও অর্থবছরের ১০ মাসের হিসাবে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো কমেছে ১৬ শতাংশ। এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ রেমিটেন্সের এই নিম্নমুখী প্রবণতায় উদ্বিগ্ন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, প্রবাসীরা এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। মার্চে পাঠিয়েছিলেন ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। তার আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৯৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছিল, যা ছিল একক মাসের হিসাবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট এক হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ (১০.২৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে এসেছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে এই ১০ মাসে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ শতাংশ।
এদিকে রেমিটেন্স কমার পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়াকে কারণ দেখাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে টাকার দরপতন ও হুন্ডিকেও দায়ী করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের একটি বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। সেসব দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তেলের দামও সেভাবে বাড়েনি, ফলে তাদের বাজেট ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। অনেকের বেতনও কমে গেছে; চাকরি হারিয়েছে কেউ কেউ। এ কারণে আমাদের প্রবাসী আয় কমে গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতির নাজুক অবস্থার কথা বলে আসছে আইএমএফ। সেখানে গিয়ে অনেকের বেকার পড়ে থাকার খবরও আসছে। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পেছনে টাকার দরপতনকে দায়ী করেন। ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, মালয়েশিয়ান রিংগিত ও সিঙ্গাপুরি ডলারের মূল্যমান সাম্প্রতিক সময়ে কমে গেছে। ফলে এসব দেশের শ্রমিকদের আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে।
রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসপি। তিনি সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছেন, অনেকে বেশি লাভের আশায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। যে কারণে রেমিটেন্স কমেছে। বর্তমানে হুন্ডির ব্যবসা জমজমাট রূপ নিয়েছে।
প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালে। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল। এরপর ২০১৪ সালে প্রবাসী আয়ে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে তা আবার ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমে যায়।

http://www.dailysangram.com/post/282815-