২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:০৪

সব নদ-নদীতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে নতুন উদ্বেগ

দেশের সব নদ-নদীতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে নদী-তীরবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি, জলজ স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির জোগানও হুমকির মুখে পড়বে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনের এ তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সময় থাকতে পদক্ষেপ না নিলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তখন যেকোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা তেমন ফলাফল বয়ে আনবে না।

এর আগে বেসরকারি সংস্থা রিভার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৬টি নদ-নদীর গুণগত মান বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সংস্থাটি দেশে ৫৬টি নদ-নদীর দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করতে গিয়ে সবকটিতে অতিমাত্রায় দূষণের প্রমাণ পায়। এরপরই প্রতিবেদনে দূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থার সুপারিশ করে বলা হয়, অন্যথায় দেশের বাকি ৭৫৪ নদীতে সে দূষণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে আরেকটি সংস্থার প্রতিবেদনে একই কারণে ভূগর্ভস্থ জলাধারেও দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, নদী বা জলাধার দূষণের ফলে মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশে ৫৬টি নদীর দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করতে গিয়ে সবকটি দূষিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং এই তিনটি নদীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এই নদীগুলোয় সহনীয় মাত্রার চেয়ে তুলনামূলক বেশি দূষণের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা। সেখানে দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যবহারকে। অপর দুই বড় কারণ হলো নদী-তীরবর্তী শিল্প কারখানাগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা, সেইসাথে পৌরসভাগুলোর ময়লা ফেলার জন্য নদীকে বেছে নেয়া।

গবেষণা বিষয়ে আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ জানান, মূলত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণেই নদীগুলো নিয়ন্ত্রণহীন দূষণের কবলে পড়েছে। গবেষণায় প্রায় সব নদীতে শিল্প-বর্জ্য, পৌরবর্জ্য বিশেষ করে মাইক্রো-প্লাস্টিক দূষণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সবচেয়ে দূষিত তিন নদীর পানিতে পিএইচ ও দ্রবীভূত অক্সিজেন ছিল আদর্শ মাত্রার অনেক কম। তার মতে, এখনি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে তা দেশের সব নদীতে ছড়িয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ (মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ) এর অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, একটার দ্বারা আরেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এক সময় কোনোটাই টিকবে না। কারখানার বর্জ্যে ইতোমধ্যে তুরাগ, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদী ধ্বংস হয়ে গেছে। এর প্রভাব অন্য নদীতেও পড়বে এটাই স্বাভাবিক।

পরিবেশবিদ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রায় দেড় বছর আগের তাদের সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে ধলেশ^রীতে শুষ্ক মৌসুমে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন যেখানে প্রতি লিটারে যেখানে ৫ মিলিগ্রাম থাকার কথা ছিল সেখানে পাওয়া গেছে দুই থেকে আড়াই মিলিগ্রাম। অর্থাৎ মানমাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে আড়াই মিলিগ্রাম কম। এভাবে একটা থেকে আরেকটা করে তা দেশের সব নদীতে ছড়িয়ে পড়বে।

এদিকে নদী দূষণ ভূগর্ভস্থ জলাধারেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। ‘হাইড্রোগ্রামিন প্রকল্পের বাস্তবায়নে ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারের পরিপূর্ণতা, পানি সংরক্ষণ ও কার্যকারিতা এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচার : বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংস্থার নির্বাহী ড. রাস বিহারী ঘোষ এ কথা জানান। তার মতে, নদী বা জলাধার দূষণের ফলে পরিবেশগত ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাটির ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ জলাধারেও দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে রক্ষায় বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর আশপাশে এবং সারা দেশের নদীগুলো দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/792829