১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪১

মামলার জালে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ

দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু তা ফেরত দিচ্ছেন না। বছরের পর বছর আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে ব্যাংক দ্বারস্থ হয় আদালতের। ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু সহসাই এসব মামলাও নিষ্পত্তি হয় না। বছরে পর বছর ঝুলে থাকে। এভাবে অর্থঋণ আদালতের মামলায় ব্যাংকের আটকে পড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এমনি পরিস্থিতিতে অর্থঋণ আদালতে চলমান মামলাগুলো যথাসময়ে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে এক সার্কুলার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের জন্য জারি করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকে সার্কুলারে বলা হয়েছে, অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর মাধ্যমে অর্থঋণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পৃথক আদালত গঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সময়াব্দ কার্যপদ্ধতি অনুযায়ী মামলাগুলো নিষ্পত্তির আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন অর্থঋণ মামলার রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, অর্থঋণ মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। এর ফলে আমানতকারী ও তফসিলি ব্যাংক উভয়ের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরো বলেছে, মামলার নিষ্পত্তির দীর্ঘ সূত্রতার পেছনে মামলার সব পক্ষ বিশেষ করে বাদি ব্যাংকের সুদক্ষভাবে মামলা পরিচালনায় অনেক অবহেলা রয়েছে, যা অনাকাক্সিক্ষত। এমতাবস্থায় অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো যথাসময়ে সুদক্ষভাবে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মামলাগুলোর ধার্য তারিখে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সাথে যোগাযোগক্রমে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সহকারে মামলা পরিচালনার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ঋণ খেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি কোনো জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো তাই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু কিছু বড় ঋণ খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করতে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করলেও ব্যাংক যাতে তাদের ঋণখেলাপি বলতে না পারে সেজন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। উচ্চ আদালত থেকে রিট করেই আবার নতুন করে ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন করেন গ্রাহক। তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বের করে নেন। ব্যাংকের খাতায় ঋণ খেলাপি হয়েও আইনের ফাঁক গলিয়ে নতুন করে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেন না। আবার ঋণখেলাপি হন। এভাবেই বছরের পর বছর এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক অনেকটা নিরুপায় হয়ে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু আদালত স্বল্পতার কারণে আবার ওই মামলাও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এভাবেই আদালতে মামলার পাহাড় জমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলার হালনাগাদ প্রতিবেদন করা হয়েছে গত জুনভিত্তিক তথ্য নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪০টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে আছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে ডিসেম্বর শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ১৮৯টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। ফলে ছয় মাসের ব্যবধানে বিচারাধীন মামলা বেড়েছে ৩৭১টি। এর বিপরীতে নতুন করে ১১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এর আগে ২০২২ সালের জুন শেষে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি মামলার বিপরীতে আটকে ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুন শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ৪৪ হাজার ৬০৫টি মামলার বিপরীতে আটকে ছিল ৯৫ হাজার ৯৩৭ কোটি, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ১১ হাজার ১৬৬টি মামলায় ৭৫ হাজার ৯৭৩ কোটি, বিদেশী ব্যাংকে ৮ হাজার ৫২২টি মামলায় ৩ হাজার ৯১৯ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ৪ হাজার ৯৩৩টি মামলায় ২ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/791811