১৬ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৩০

ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ২৪ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ২রা সেপ্টেম্বর ২১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল দেশে। ডেঙ্গুতে এবছরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫২০ জনে। ডেঙ্গুতে নবেম্বর মাসেও মৃত্যুর মিছিল। গত ১৫ দিনে মারা গেছেন ১৭২ জন। একদিনে আরও ১ হাজার ৬২৩ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে গ্রামে। মৃত্যুও বেশি গ্রামে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর মধ্যে রাজধানীতে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৯ জন। মৃত ১ হাজার ৫২০ জনের মধ্যে নারী ৮৬৮ জন এবং পুরুষ ৬৫২ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৬৩৫ জন এবং রাজধানীতে ৮৮৫ জন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬২৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ৩৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ২৭৪ জন ভর্তি হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৯ জন।

 ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসেÍ৩৯৬ জনের। আর গত মাসে মারা গেছেন ৩৫৯ জন। এর আগে আগস্টে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৩৪২ জনের। চলতি বছরের মার্চ মাস ছাড়া সব মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেখেছে দেশ। দেশে বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় ২০০০ সালে। ওই বছর মারা যান ৯৩ জন। করোনা মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ডেঙ্গুতে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৬৮ জন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। 

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগী ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৯৬ জন। অক্টোবরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩৫৯ জন।

নবেম্বরের ১৫ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৯০ জন এবং মারা গেছেন ১৭২ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। বর্তমান রোগীর চেয়ে আরও ১০ গুণ বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।

এদিকে এক গবেষণায় ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রোগীদের খরচের গড় হিসাব করা হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৯ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি তিন হাসপাতালের মধ্যে রোগীদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ হাজার টাকা। এরপর মুগদা হাসপাতালে ২৪ হাজার আর বিএসএমএমইউতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিন হাসপাতালের গড় খরচ ২৫ হাজার টাকা।

ঢাকার বাইরে রোগীদের গড় খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের খরচই গবেষণায় হিসাবে ধরা হয়েছে। গত আগস্ট মাসের শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পেছনে সরকারি ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। আর ওই সময় পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মোট রোগীর ৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে, বাকি ৩০ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

গবেষণা অনুযায়ী, বেসরকারি আনোয়ার খান মেডিকেল ও ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজে রোগীপ্রতি গড় খরচ হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। তবে ছয়টি মেডিকেল মিলিয়ে গড় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে। শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের শয্যা, পরীক্ষার খরচ এবং ওষুধÍসব দিয়েই ডেঙ্গু রোগীদের সহায়তা করার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যাতে রোগীর খরচ কমানো হয়। ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদেরও বাইরে টেস্টের জন্য খরচ করতে হয়েছে, গবেষণার এমন ফল সম্পর্কে ডা. নাজমুল ইসলাম বলছেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেন সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা যায়। গবেষণা অনুযায়ী, বেসরকারি আনোয়ার খান মেডিকেল ও ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজে রোগীপ্রতি গড় খরচ হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। তবে ছয়টি মেডিকেল মিলিয়ে গড় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার বেশি।

https://www.dailysangram.info/post/540802