১৩ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৯:৩৬

জেনেভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই আজ

 

ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)’র আওতায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড পর্যালোচনা আজ। দিনভর এই শুনানিতে খোলাখুলিভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তথা অভিযোগগুলো উত্থাপিত হবে এবং এ নিয়ে সরকারের বক্তব্য শোনবে জাতিসংঘ টিম। সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ‘ভঙ্গুর’ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক ফোরামে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। সেই বিবেচনায় এবারের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ’র আওতায় বিস্তৃত পরিসরে এমন আলোচনা বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পেশাদার কূটনীতিকরা। তাছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) ৭ শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বাহিনীর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর জাতিসংঘে এটাই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রথম শুনানি। যেখানে মাববাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় সরকার ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। চার বছর অন্তর অনুষ্ঠেয় ইউপিআর’র ওই শুনানিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সরকারের পক্ষে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করবে। 

সেই দলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও শেষ সময়ে এসে তিনি বাদ পড়েছেন বলে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য ওই শুনানি শেষে ভার্চ্যুয়ালি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন আইনমন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ধ্যায় এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করছে। 

দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করতে গুম-খুন, গোপন কারাগারে আটকে রাখাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ জাতিসংঘ। এ নিয়ে সম্প্রতিক সময়েও বিবৃতি এসেছে।

মানবাধিকার কাউন্সিলের আজকের শুনানিকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ টিম বাংলাদেশের কাছে জিজ্ঞাসা বিষয়ক একাধিক খসড়া প্রস্তুত করেছে। সেসব খসড়ায় অনির্দিষ্টকাল ধরে আটক ভিন্নমতের লোকজনের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের আইনবহির্ভূতভাবে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে? সে প্রশ্নও  উত্থাপন করা হয়েছে। 

সূত্র মতে, তিনটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তা হলো- ১. সরকার প্রদত্ত জাতীয় প্রতিবেদন। ২. জাতিসংঘের বিভিন্ন তথ্যের সমন্বয়ে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয়ের প্রস্তুতকৃত সংকলন। ৩. জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বা সংগঠনের জোটগুলোর দেয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয়ের প্রস্তুতকৃত সংকলন। প্রতিবেদনগুলো থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পর্যালোচনাধীন রাষ্ট্রকে সুপারিশ প্রদান করে থাকে। মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের দেয়া সুপারিশগুলো সমর্থন করতে পারে কিংবা নোটেট রাখতে পারে। যার অর্থ এই সুপারিশগুলো এখনই বাস্তবায়ন না করলেও ভবিষ্যতে পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে এই পর্যালোচনায় অংশ নেয়ার জন্য সরকার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বা সংগঠনের জোটগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। 

এগুলো জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এবারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বা সংগঠনগুলোর জোট থেকে ৩৯টি অংশীজনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, সুইডেন, উরুগুয়েসহ বিভিন্ন দেশ তাদের প্রশ্ন জমা দিয়েছে, যেখানে গুম সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ অনুমোদন ছাড়াও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সংগঠনগুলোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করাসহ নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এবারের পর্যালোচনায় প্রশ্ন ও সুপারিশ করার জন্য ১১৪টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিগত চার বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরাসহ উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে প্রতি চার বছর পরপর ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ অনুষ্ঠিত হয়।

https://mzamin.com/news.php?news=83254