১৩ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার, ৯:১৭

নতুন বিনিয়োগে সতর্ক থাকার পরামর্শ

ভুয়া ঋণে ব্যাংক খাত নাজেহাল

 

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে ভুয়া ঋণ বেড়ে যাওয়াকে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে ব্যাংক খাত খুবই নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। তাই যাচাই-বাছাই ছাড়া নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকার দাবি জানিয়েছে সরকারি ছয়টি সংস্থা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের একক মোবাইল নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাগুলো। একক মোবাইল নম্বর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে কেউ নতুন করে ভুয়া ঋণ নিতে পারবে না বলে দাবি তাদের।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ৬ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠকে এসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সজেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), রেজিস্টার অব জয়েনস্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্ম (আরজেএসসি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) ও সমবায় অধিদফতরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দু রউফ তালুকদার।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের অনিয়মগুলো সবসময় একক সংস্থার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর যৌথভাবে কাজ করার ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়া উচিত। তখন কোনো গ্রাহক একটি সংস্থাকে ফাঁকি দিলেও অন্য সংস্থাগুলো সেই অনিয়ম চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। সব সংস্থা যৌথভাবে কাজ করতে থাকলে একটি সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, খেলাপি, অর্থপাচার, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদি কমে আসবে। সুশাসন ফিরে আসবে আর্থিক খাতে। বেগবান হবে অর্থনীতি।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনীতি এখনো সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ জন্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা একটি অন্যতম কারণ। দেশের অর্থনীতিকে আরো বেগবান করতে সংস্থাগুলোকে সমন্বিত করার সময় এসেছে। কারণ কোনো একক সংস্থার পক্ষে পুরো অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিনের এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য বিদ্যমান আইনে মজুরি কমিশন গঠন করার সুযোগ নেই। ব্যাংকের আইনে বেতনকাঠামো থাকলেও কোনো কমিশন সম্ভব না। এটা করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয় বা সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান (ইভিসি) মো: ফসিউল্লাহ বলেন, আলোচনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আইনের সীমাবদ্ধতা সংস্কার ও সংশোধনীর বিষয়গুলো অন্যতম। এগুলো বাস্তবায়ন হলে আর্থিক খাত আরো শক্তিশালী হবে। যার সুবিধা পাবে সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক বলেন, আজকে আলোচনাটি ছিল আমাদের নিয়মিত বৈঠকের অংশ। এখানে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরিচালকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। ফলে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অন্য দিকে পুনঃতফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়াও ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন, অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন এক লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি, দেউলিয়া আদালতে আটকে আছে ৪২৪ কোটি, ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনসহ আইনের চাদরে লুকানো দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ আরো অনেক বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এসব সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/791085