১২ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১১:০৩

অবরোধ ও গ্যাসসংকটে পণ্য উৎপাদন-সরবরাহ কমছে

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজার এটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাবেরা আলম এখান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন। গত বৃহস্পতিবারও চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ কিছু নিত্যপণ্য কিনতে যান।

কিন্তু দাম বাড়তি দেখে তালিকা ধরে সব পণ্য কিনতে পারেননি। চাহিদার অর্ধেক পণ্য কিনে বাড়ি ফেরেন।

সাবেরা আলমের মতো ওই বাজারে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের সবার ভাষ্য অভিন্ন।

আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেলাতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে আধপেটা থাকতে হতে পারে।

মোগরাপাড়া চৌরাস্তার মুদি দোকানদার শাহজাহান মিয়া জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হরতাল-অবরোধ চলমান থাকায় পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্যাসসংকটের কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।

এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবছর শীতকাল শুরুর আগে যেখানে পাম অয়েল বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে লিটারপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে যায়, সেখানে এ বছর উল্টো চিত্র। হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর ১২২ টাকা লিটারের পাম অয়েলের দাম বেড়ে এখন হয়েছে ১৩২ টাকা। মূলত দরিদ্র মানুষ এই তেল ব্যবহার করে।

এক সপ্তাহ আগে নেপাল ও ভারত থেকে আমদানি করা মোটা মসুর ডালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৯২ টাকা। বর্তমানে বেড়ে এর দাম হয়েছে ১০২ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিনির। ১৫ দিন আগে যে চিনি ১১০ টাকা ছিল, এখন বেড়ে ১৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার পরও মিলগুলো পরিবহন সংকটের কারণে দোকানদারদের সরবরাহ করতে পারছে না। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বস্তায় ১৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। ১৫ দিন আগে যে পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি ছিল, এখন দাম বেড়ে খুচরা বাজারে কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আনন্দবাজার পাইকারি হাটের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, এভাবে দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।

দেশে ভোগ্য পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিটি গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, বিশেষ করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে পরিবহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সময়মতো পণ্যসামগ্রী গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বর্তমানে গ্যাসসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডলার সংকটে ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। উৎপাদনকাজে জড়িত শ্রমিকরা হরতাল-অবরোধে সময়মতো উপস্থিত হচ্ছে পারছেন না। এসব কারণে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

সোনারগাঁর মেঘনাঘাট শিল্প এলাকার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন চালকের গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রাণের ভয়ে আমরা এখন অবরোধ ও হরতালে গাড়ি চালাতে চাই না। মালপত্রও দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো যাচ্ছে না।’

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাসসংকটের কারণে আমাদের একাধিক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। হরতাল-অবরোধে পণ্যসামগ্রী পৌঁছানো কষ্টকর হচ্ছে। সরকারের উচিত কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। ভোগ্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/11/12/1335370