১২ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:৪৮

গাজীপুরে ২২ মামলায় গ্রেফতার ৮৮ জন

আশুলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ

মজুরি বোর্ড ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় শতাধিক পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও জিরাবো-বিশমাইল সড়কের কাঠগড়া আমতলা, বড় রাঙ্গামাটিয়ার বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ পোশাক কারখানার গেটে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে বন্ধের নোটিশ।

 

টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, অনন্ত গার্মেন্টস, হা-মীম, শারমীন, পাইওনিয়ার লিমিটেড এবং জিরাবো-বিশমাইল সড়কের এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ডুকাটি অ্যাপারেলস, আগামী অ্যাপারেলস, ক্রোসওয়্যার লিমিটেড, সেইন অ্যাপারেলস, টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নিট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ শতাধিক পোশাক কারখানার গেটে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।

ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার গেটে টাঙ্গানো নোটিশে লেখা রয়েছে, কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাহীনতা ও অবৈধ ধর্মঘট করার কারণে ৯ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিংবা কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে তা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।

আগামী এ্যাপারেল্স লিমিটেড কারখানার নোটিশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল।

কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও জানিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগামী এ্যাপারেলস কারখানার এক শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। আমাদের অনেকেই কারখানায় সকালে গিয়ে নোটিশ দেখে ফিরে এসেছি। কারখানা কর্তৃপক্ষ যে আইন দেখিয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে সেই আইনে কারখানা যত দিন বন্ধ থাকবে তত দিনের বেতন পাবে না শ্রমিকরা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো চিঠি দেয়নি। তবে বিভিন্নভাবে আমরা বন্ধের খবর পেয়েছি।

গাজীপুরে ১২৩টি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত : ২২ মামলায় গ্রেফতার ৮৮
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, মজুরি বাড়ানোকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে গাজীপুরের ১২৩টি কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা। ওই ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলায় এ পর্যন্ত ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিগগিরই বন্ধ কারখানা খুলে উৎপাদনে যাবে সব শিল্পকারখানা। গতকাল শনিবার দুপুরে শিল্প পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জাকির হোসেন খান শ্রমিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গার্মেন্ট পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডিআইজি জাকির হোসেন খান বলেন, গাজীপুরের কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও ভোগড়া এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ হলেও কোনাবাড়িতে শ্রমিকদের আন্দোলন হয়েছে বেশি। আশুলিয়াতে কিছুটা আছে। চট্টগ্রাম এলাকায় আন্দোলন নেই। আমাদের ধারণা, কোনাবাড়িতে একটা গ্রুপ আন্দোলন করার জন্য শ্রমিকদের উসকানি ও মদদ দিচ্ছে। যারা উসকানি দিচ্ছে তাদেরকে বা ওইসব গ্রুপকে চিহ্নিত করার কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স সেল। তিনি বলেন, শিল্প পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, জেলা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ঘোষণা করেছেন। এখানে যারা উসকানি দিচ্ছেন আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

ডিআইজি বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা শিল্প কারখানায় এ ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত, যেসব শ্রমিক ওই শ্রমিকদের সাথে বহিরাগত লোক নিয়ে আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। এর পেছনে যেসব বহিরাগত জড়িত রয়েছে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে। তিনি এ সময় বলেন, গাজীপুর ও কোনাবাড়ি মিলে ১৭টি কারখানা বন্ধ আছে। মালিক কর্তৃপক্ষ যাতে কারখানা চালু রাখেন আমরা তাদের সাথে কথা বলছি। তারা দ্রুত উৎপাদনে যাবে। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলমসহ শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন।

প্রসঙ্গত, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর থেকে আন্দোলন শুরু করে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরা। গত ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে পর দিন বুধবার থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। তারা বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। কয়েক দিনের সংঘর্ষকালে তিনজন নিহত হন। নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়াতে বেশ কিছু কারখানায় তাৎক্ষণিক ছুটিও ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/790841