৭ মে ২০১৭, রবিবার, ১০:১২

শুরুর আগেই ব্যয় বাড়ল ৩২৫ কোটি টাকা

সময়মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ শুরুর আগেই চট্টগ্রাম মহানগরে নতুন খাল খনন প্রকল্পে ৩২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। তিন বছর আগে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কাজ এখনও মাঠে না গড়ালেও দুই দফায় বেড়েছে ব্যয়। প্রথম দফায় ৩৭ কোটি ৪০ লাখ ও দ্বিতীয় দফায় ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এ প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অথচ ২০১৪ সালে অনুমোদনকালে প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সম্প্রতি ব্যয় সংশোধন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আবারও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় চসিক। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোরও আবেদন করা হয়। গত ৪ মে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে সংশোধিত ব্যয় যাচাই-বাছাইয়ের পর এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, 'ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে। প্রকল্প শুরু হওয়ার খবর পেয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য অনেকে প্রকল্প এলাকায় ঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে তা শনাক্ত করেছি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় কবরস্থান ও মসজিদ ছিল। যার কারণে অ্যালাইনমেন্ট সংশোধন করতে হয়েছে। এসব জটিলতা রেখে কাজ শুরু করলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। এসব ঠিক করে সংশোধিত প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন পেলে জুনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।'

চসিক সূত্র জানায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে তিনটি নতুন খাল খননের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন ছিল একটি। ২০১১ সালে এই খাল খননের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব কর্মসূচি (ডিপিপি) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আড়াই বছর পর ২০১৪ সালে ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এ প্রকল্পে প্রাথমিক অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ প্রকল্পে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থছাড় না হওয়ায় বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও। প্রথম দফায় ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এতে সরকারের বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা এবং বাকি টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করার কথা ছিল। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন পায় সিটি করপোরেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের জন্য ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২২৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

অথচ চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চসিককে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় খাল খননের কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ভূমি

অধিগ্রহণের টাকা দিতে না পারায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমও শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে মৌজা রেট বাড়িয়েছে সরকার। ফলে বেড়ে যায় ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয়। সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৫ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। খালটির দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬৫ ফুট। খালের উভয় পাড়ে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খালের দুই পাশে নির্মিত হবে ২০ ফুট প্রশস্ত সড়ক। খাল খনন প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। পাঁচটি এলএ কেসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শিগগির শুরু করা হবে।'

http://bangla.samakal.net/2017/05/07/290598#sthash.0WkP5Cmk.dpuf