১২ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ১০:৪২

চিনির বাজারে অস্থিরতা

চিনির বাজারে অস্থিরতা কোনভাবেই থামছে না। প্যাকেটজাত চিনির দাম গায়ে ১৩৫ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গত এক সপ্তাহে খোলা চিনির কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুচরা বাজারে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় চিনি বিক্রি হচ্ছে। সরকার ও চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার দর নির্ধারণ করে দিলেও, তা কার্যকর হয়নি। প্রায় আড়াই মাস আগে খোলা চিনির কেজি ১৩০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে।

মূলত, হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১০-১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০ দিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করলেও বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি। এমনকি বেশি দাম দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি বাজারে বেশির ভাগ খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ‘আমাদের খোলা চিনি কেনা ১৩৭ টাকা করে। এরপর দোকানে আনতে পরিবহন খরচ আছে। তাই আমরা ১৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৪৫০ টাকা। এখন ৫০ কেজির বস্তা ৬৮৫০ টাকা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ৬৪০০ টাকা’।

আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে আবারো দাম বেড়েছে চিনির। এ ছাড়া ডলারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করছে গ্যাস সঙ্কট। সে জন্য চাহিদা মতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে চিনির সরবরাহ কমছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক বছর আগে এই সময় চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা। টিসিবি’র তথ্যমতে, চিনির খুচরা দাম গত এক মাসের ব্যবধানে ৩.৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এই হার আরও অনেক বেশি। এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায ২০ শতাংশ।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিটন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করেছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই শুল্কহার বলবৎ থাকবে। দাম যেন ক্রেতার নাগালে থাকে, সে জন্যই শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবে শুল্ক কমানোর ঘোষণার দিন বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, কোনো কোনো আমদানিকারকের কাছে চিনি নেই। যাদের আছে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মিলগেটে পাইকারি প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ১৩৭ টাকা দিয়ে। দেশে চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে জানানো হয়েছে, কারখানায় গ্যাসের চাপ কমায় উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে দাম আবারো বেড়েছে। ডলারের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক।

চিনির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে বেশ আগেই। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঝে মাঝে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা কোনভাবেই কাজে আসছে না বরং যতই দিন যাচ্ছে ততই এই নিত্যপণ্যটির নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় চিনির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আমদানি শুল্ক কমানোসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

https://dailysangram.info/post/540421