১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১১:০১

সোয়া ৩ কিমি. সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৬ বছর

সময়ক্ষেপণে খরচ বেড়েছে ২৪০ কোটি টাকা

 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারার কারণে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে খরচ বাড়ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক হতে মাদানি এভিনিউ-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সোয়া ৩ কিমি. সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাড়তি ২৪০ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে। আড়াই বছরে যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল সোয়া পাঁচ বছরে তার ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে। এজন্য দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন ছয় বছরে উন্নীত হলো বাস্তবায়নকাল। এতে প্রতি কিলোমিটার সড়ক বানাতে যাবে ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। অথচ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বর্তমান মেয়াদের সরকারের প্রথম একনেক সভার ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, তিন বছরের বেশি কোনো প্রকল্প করা হবে না। আর মেয়াদ দু’বারের বেশি বাড়ানো হবে না। কিন্তু বেশির ভাগ প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধিতে রেকর্ড করেছে।

সংশোধিত প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়কের সাথে গুলশান মাদানি এভিনিউ হয়ে সিলেট মহাসড়কের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা শহরের যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমানো এর লক্ষ্য। এর জন্য ২০১৮ সালের জুলাইতে অনুমোদন দেয়া হয়। মূল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অনুদানে মোট ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১ জুলাই ২০১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ৩০ অক্টোবর ২০১৮ একনেকে অনুমোদিত হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) কর্তৃক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক দ্বিতীয়বার প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোট ৪৯৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ০১ জুলাই ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ প্রথম সংশোধন অনুমোদন করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী কর্তৃক তৃতীয়বার করে বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মোট ৬৯৬ কোটি ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে প্রকল্পের ওপর ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সংশোধিত ডিপিপি মোট ০১ জুলাই ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক।
প্রকল্পের মূল কাজগুলো হলো, ৩৪.৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ, সড়ক বাঁধ প্রশস্ত করা, সোয়া তিন কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, সোয়া তিন কিলোমিটার সার্ফেসিং, ৩০০.৯৮ মিটার মোট চারটি সেতু নির্মাণ, সাড়ে ৬ কিলোমিটার আরসিডি ড্রেন নির্মাণ, সাড়ে ছয় কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ করা।

প্রস্তাবনার খরচের হিসাব বিভাজন থেকে দেখা যায়, ৩৪.৭৩ একর জমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তিন গুণ ব্যয় ধরে প্রতি একর জমির দাম ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৫ লাখ টাকা। থোক ক্ষতি পূরণ ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা, সড়ক বাঁধ প্রশস্ত করার জন্য ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সোয়া তিন কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ খাতে ২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর সোয়া তিন কিলোমিটার সার্ফেসিং খাতে মোট খরচ ২১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যেখানে কিলোমিটারে ব্যয় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বেশি। ফলে প্রতি কিলোমিটার সড়ক বানাতে যাবে ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। ৩০০.৯৮ মিটার মোট চারটি সেতু নির্মাণে খরচ হবে ২০১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রতি সেতুতে ব্যয় ৫০ কোটি টাকার বেশি। সাড়ে ৬ কিলোমিটার আরসিডি ড্রেন নির্মাণে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রায় তিন কোটি টাকা যাবে প্রতি কিলোমিটারে। সাড়ে ছয় কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণে যাবে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সওজ বাস্তবায়ন করলেও এতে পরামর্শক খাতে তিন কোটি টাকার বেশি খরচ ধরা হয়েছে।

বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলছে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স লিমিটেডের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। সড়কটির বিদ্যমান অ্যানুয়াল এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিটি) ৬ হাজার ২টি। আর প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে সড়কটির এএভিটি বৃদ্ধি পাবে। সড়কটি নির্মিত হলে ভ্রমণ সময় হ্রাসসহ যানবাহন পরিচালন ব্যয় সাশ্রয় হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোয়া পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে ৪২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৮৬.০৭ শতাংশ। আর বাস্তব অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতির তুলনায় বাস্তব অগ্রগতি কম। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের। আড়াই বছরে শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্প সংশোধনের পূর্বে ৩৩.০৬৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের ক্রয় বাবদ যায় ছিল ১৪৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে মাত্র ১.৬৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় বেড়েছে ২০৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অনেকাংশ পাচ্ছে বড় বড় আবাসন প্রকল্পগুলো। অথচ এ রাস্তা নির্মাণে তাদেরই লাভ বেশি হয়েছে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/790610