১১ নভেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১০:৫৬

বাজার মূল্যস্ফীতি ও জনদুর্ভোগ

-ইবনে নূরুল হুদা 

 

আমাদের দেশের মত এতো অস্বাভাবিক, অনিয়ন্ত্রিত ও নৈরাজ্যকর বাজার পরিস্থিতি বিশে^র কোথাও দেখা যায় না। আসলে আমাদের বাজারের ওপর কারো কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার চলে অতিমুনাফাখোর, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তাই অনাকাক্সিক্ষত বা অযৌক্তিকভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ানো হলেও তা দেখভাল বা নিয়ন্ত্রণ করার মত কোন কর্তৃপক্ষ সক্রিয় আছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। ফলে বাজার চলে বাজারের গতিতে; অভিভাবকহীন অবস্থায়। এক অশুভ ও অশরীরি শক্তির নিয়ন্ত্রণে।

মূলত, আমাদের আয় না বাড়লেও প্রতিনিয়তই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। প্রতিনিয়ত একেকটা পণ্যের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এ অসাধু চক্রের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো কেউ কার্যকর চেষ্টাও করছেন না। এদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদা পূরণ কঠিন হয়ে পড়ছে। গরিবের প্রোটিনের উৎস ডিম ও বয়লার মুরগির মাংসও উচ্চবিত্তের খাবারে পরিণত হচ্ছে। গরু বা খাসির গোস্ত তো বছরে একবার কুরবানির ঈদ ছাড়া খাওয়া সম্ভব হয় না। সম্পদের ভিত্তিতে যে শ্রেণিবিভাজন রয়েছে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্ত সেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিলুপ্তির পথে। দেশের সকল সম্পদ এখন মুষ্টিমেয় কতিপয় মানুষের হাতে।

এমতাবস্থায় বাকি সাধারণ মানুষের মাছ-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে চলা জীবন-যাপনে প্রথম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ২০২০ সালে করোনার কারণে। এরপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আরও কঠিন হয়ে যায় মানুষের জীবন-যাত্রা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটেছে মূল্যস্ফীতি। করোনা পরবর্তীতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি বরং দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হয়েছে। অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) প্রথম মাস জুলাই শেষেই মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরে সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের মধ্যে।

নানাবিধ কারণেই গোটাবিশে^ই মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। তবে ট্রেড ইকোনমিকসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি সূচকটি সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরাই ব্যতিক্রম। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই মূল্যবৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। যা নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা কাজে আসছে না। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের কারসাজি এই মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিকে জটিল ও অস্থিও করে তুলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে পাশের দেশ মিয়ানমার ও পাকিস্তানে।

জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইতালিতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, জার্মানিতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, ফ্রান্সে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৪ শতাংশ, কানাডায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং জাপানে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আর জি-৭ দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আমাদের দেশের অর্ধেকেরও কম। গত বছরের মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশে উঠেছিল; যা ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। জি-৭ দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির এই হিসাব গত মে মাসের। এখন মূল্যস্ফীতি আরও কম।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় সীমিত। দেশের স্বার্থে পণ্যের মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করা এবং মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। সরকারের পক্ষে সীমিত পরিসরে কাজটি করা তথা বিভিন্ন পণ্যের দাম বেধে দেওয়া হলেও বাজারে এর কোন প্রতিফলন নেই। সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গঠনের প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান ও নানা রকম সুযোগ-সুবিধার কারণে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। দেশের এ উন্নয়ন স্থিতিশীল রাখতে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় মাত্রায় রাখা একান্ত প্রয়োজন বিবেচনায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেধে দেওয়া হলেও বাজার সিন্ডিকেট এসব সিদ্ধান্ত মোটেই করছে না। ফলে বাজারে এর কোন ইতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই জনদুর্ভোগ অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

ফলে অনেক দিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে চিরেচ্যাপ্টা স্বল্পআয়ের মানুষ; ভোগ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরেই অবস্থান করছে। এর মধ্যেই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীসহ টাউট-বাটপাররা। তাদের অতিমুনাফা করার এ প্রবণতার মাশুল গুনছে সাধারণ মানুষ; ক্রমেই আরও কষ্টকর হয়ে পড়েছে জীবনযাপন। দামের সঙ্গে পেরে উঠছে না সাধারণ মানুষ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। পণ্যমূল্যে স্বস্তি ফেরাতে সরকার পণ্যের দাম বেধে দেওয়ার পাশাপাশি আমদানির অনুমতি ও নিয়মিত তদারকি অভিযান চালালেও এ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না বরং দিনের পর দিন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতরই হচ্ছে।

সরকারি তথ্যেই গত সেপ্টেম্বরে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে পুরো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে উদ্বেগজনক উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন। পাশাপাশি আমদানিতে কড়াকড়ি ও ডলার সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে ঋতপত্র (এলসি) খোলা কমেছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এমন সঙ্কটকালে মওকা বুঝে হঠাৎ-হঠাৎ সরবরাহ-সঙ্কট সৃষ্টি করে বিভিন্ন পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমেনি, কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অস্বাভাবিক মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকার ফাঁকে চলছে একের পর এক কারসাজি। পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। অথচ বাজার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যের দাম বেধে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেসবের কোন সুফল বাস্তবে মিলছে না।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তা কাজে আসছে না। উল্টো তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে। উপরন্তু বাজারে বিরাজ করছে অব্যবস্থাপনা। সমস্যার গোড়ায় হাত দিচ্ছে না সরকার। কারসাজি যদি হয়ে থাকে, তাহলে কারসাজিকারীদের আইনের আওতায় আনা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করাও সময়ের দাবি। অনেক ক্ষেত্রে হাতেগোনা কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ, নতুনরা বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। তাদের সামনে অনেক বাধা। সামান্য ট্রেড লাইসেন্স খুলতে গিয়েই তারা নাজেহাল হচ্ছেন। অপরদিকে বাজারে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হলেও প্রান্তিক কৃষক, খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না বরং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে ভোক্তার গলায় কাঁটা বিঁধিয়ে দিচ্ছে পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দর। সরকার প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেধে দেয়ার পরও বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধির খবরে পণ্যটির দাম রাতারাতি আরও বেড়ে গেছে; বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে আলুর ভালো ফলন হওয়ার পরও সরবরাহ কম দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকায় কেনা আলু বর্তমানে খুচরায় ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম ৩৫-৩৬ টাকা শুধু ঘোষণাতেই রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আলুও আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা বেধে দিলেও বাজারে কিন্তু ১৫ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে। ডিমও আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি বরং আগের তুলনায় বেশ অবনিতই হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যবসায়ীদের অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি পৃথক ভোক্তা মন্ত্রণালয়ের দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির পক্ষে বলা হয়েছে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম বেধে দিয়ে কিংবা বাজারে অল্পসংখ্যক অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঠিক মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরবরাহেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকার আবশ্যকতা রয়েছে। প্রয়োজনে সরাসরি আমদানি করে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। যদিও দেশে উৎপাদন বাড়াতেই হবে। কারসাজিকারীরা চিহ্নিত হলে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।

এতে আরো দাবি করা হয়, ভোক্তা অধিদপ্তরের মতো এককভাবে কোনো সংস্থার পক্ষে বা এককভাবে কোনো নীতি প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তা ছাড়া সংস্থাটির জনবলও অপ্রতুল। সরকারের নীতি তৈরিতে যাতে ভোক্তাদের স্বার্থ প্রতিফলিত হয় সে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা বিভাগ কিংবা মন্ত্রণালয় থাকা প্রয়োজন।

বাজারে আমিষের দাম অনেক আগেই ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ৩১০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গরুর গোস্ত কেজি ৭৮০ টাকা, খাসি ১১০০ টাকা। সস্তার পাঙাশের কেজি এখন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বল্প দামের সবজিও এখন দামি পণ্য। যা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। 

বাজারের এমন দশায় স্বল্পায়ের, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ব্যয়ের চাপে পিষ্ট ক্রেতারাও এখন তিন ভাগে বিভক্ত। কেউ অনায়াসে কিনছেন দামি সবজি। কেউ কিনছেন একটি করলা, একটি বেগুন কিংবা ২৫০ গ্রাম করে তরিতরকারি। কেউ আবার বাজারে না ঢুকে এর আশপাশে টুকরি নিয়ে বসা পুরনো, বাসি-নষ্ট সবজির দোকানে ভিড় করছেন। অগ্নিমূল্যের বাজারে দরিদ্রের শেষ ভরসা শাক। সেই শাকও চলে গেছে রীতিমত ধরাছোঁয়ার বাইরে। একদিকে শাকের আঁটি সরু হচ্ছে, অন্যদিকে পুরু হচ্ছে দাম। এক আঁটি লালশাকও এখন অন্তত ৩০ টাকা, লাউশাক ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শাকপাতা কিনতেও এখন হিসাব করতে হচ্ছে। সামান্য কলমি শাকের আঁটিও ১৫ টাকা। পাঙাশ মাছ কিনতেও এখন কষ্ট করতে হয়। এমনিতেই আয়ের টাকা দিয়ে খরচ পোষায় না। এর মধ্যে বাজারে ঢুকলে কষ্টটা আরও বাইড়া যায়।

এদিকে বাজারে নতুন করে আটার দাম বেড়েছে। ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ২ কেজির আটার প্যাকেট এখন ১২০ টাকা হয়েছে। মোটা দানার মসুর ডালের পাশাপাশি চালের দামও বেড়েছে। চিকন চালের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত থাকলেও মাঝারি চালের কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা এবং মোটা চালে ২ টাকা বেড়েছে। কোথাও কোথাও মোটা চালে ৪ টাকাও বেড়েছে। সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক অর্ধেক কমানোর পর রাজধানীর পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হওয়ার বদলে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এতদিন পাইকারিতে ১২৯ টাকা দরে চিনি মিললেও সম্প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তি রয়েছে। যা আমাদের দেশের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়।

নানাবিধ কারণে আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমতে কমতে এখন একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। আর এই বাড়তির ধারা এখনো অব্যাহতই রয়েছে। বাজারের কোন ধারাবাহিকতা নেই। অতিমুনাফাখোর, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছামত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। একবার যে পণ্যের দাম বাড়ছে, তা আর কোন ভাবেই কমছে না। আর এভাবেই চলছে আমার বাজার ব্যবস্থাপনা। বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে এক স্বেচ্ছাচারী গোষ্ঠীর হাতে। তারাই এখন বাজারের দ-মু-ের কর্তা। 

এমতাবস্থায় মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীক জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। একই সাথে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বাজার নিয়ন্ত্রণে যেসব রাষ্ট্রীয় সংস্থা কার্যকর রয়েছে তাদের তৎপরতা বাড়ানো দরকার, যাতে কেউ অযৌক্তিকভাবে মূল্যস্ফীতি ঘটাতে না পারে। বাজারে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন তাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহশীলতা দেখানো সময়ের দাবি ও খুবই বাস্তবসম্মত। দেশের আত্মসচেতন জনগণ সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।

https://www.dailysangram.info/post/540349