৬ মে ২০১৭, শনিবার, ১০:১৪

৪ মাসে নৌ-দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৮৯ জন

চলতি বছরের প্রথম চার মাসে নৌ-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮৯ মানুষ । এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর নৌ-দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথরক্ষা জাতীয় কমিটি।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে ‘চলমান দুর্যোগ মওসুম ও বিদ্যমান নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় জাতীয় কমিটি এ তথ্য জানায়। নৌ, সড়ক ও রেলপথরক্ষা জাতীয় কমিটি এ আলোচনা সভা আয়োজন করে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, জাতীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর, জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জিব বিশ্বাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসি সিকদার, সিটিজেন্স রাইট্স মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমান, যাত্রী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া।
আশীষ কুমার দে বলেন, চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে দেশের বিভিন্ন নৌপথে দুর্ঘটনায় মোট ৮৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই ধারা বজায় থাকলে এ বছর নৌ-দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০১৫ সালে নৌ-দুর্ঘটনায় দেশের বিভিন্ন নৌপথে ৩৫৯ জন এবং ২০১৬ সালে ২৭৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
কালবৈশাখীর মতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে সরকারকে সতর্কতা অবলম্বন ও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মনজুরুল আহসান খান বলেন, এ দেশে শ্রমিকের বেতন বাড়ে না অথচ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বেতন ডাবল হয়। দেশের নৌ ও সড়ক পরিবহনসহ শিল্প সেক্টরে শক্তিশালী মাফিয়া চক্র গড়ে উঠেছে। তারা সরকারের অর্থমন্ত্রীকেও ধমক দিতে ভয় পায় না। এই মাফিয়া চক্রের হাতে সরকার এবং জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে। মাফিয়া চক্রের দাপটে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষ। এ দুরবস্থা মোকাবিলায় জনমতের চাপ সৃষ্টি করে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, এ জন্য নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
মনজুরুল আহসান খান বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কুপ্রভাবে গ্রীষ্মকালেই শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে প্রলয়ংকরী ঝড় হচ্ছে, অনেক এলাকায় বন্যাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আসন্ন ঈদে এই ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
সূচনা বক্তব্যে যাত্রীভোগান্তি লাঘব ও আসন্ন ঈদুল ফিতরে নিরাপদ নৌ-চলাচলের স্বার্থে ১০টি জরুরি সুপারিশ তুলে ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ, সার্ভেবিহীন ও অনিবন্ধিত লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। চলমান দুর্যোগ মওসুমকে বিবেচনায় নিয়ে ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে পহেলা রমযান থেকে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারী নৌযান, মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারের বিরদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্যোগ মওসুমে টেলিভিশন ও বেতারে এবং লাউড স্পিকারে সব টার্মিনালে প্রতি ঘণ্টায় আবহাওয়া বার্তা প্রচার করতে হবে। সব নৌযানকে আবহাওয়া বার্তা মেনে চলাচল করতে বাধ্য করতে হবে। জননিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের স্বার্থে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। ঈদে ত্রুটিপূর্ণ ও লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ চলাচল বন্ধে ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ লঞ্চগুলোকে ঈদ-পূর্ববর্তী ১৫ দিনের মধ্যে বার্ষিক সার্ভে সনদ দেয়া যাবে না। কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ প্রশাসনকে নৌ-নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্তকরণ করতে হবে। ঈদের ১৫ দিন আগে সব টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাটে ক্লোজ সার্কিট টিভি স্থাপনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করতে হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে সব টার্মিনালের শৌচাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পানিসহ সেগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ইফতারির জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

http://www.dailysangram.com/post/282589-