৬ মে ২০১৭, শনিবার, ১০:০৫

ত্রাণের অপেক্ষায় হাওর তীরের মানুষ

হাওর তীরে হাহাকার তীব্র হচ্ছে। সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি বেশিরভাগ হাওরবাসী। ওদিকে হাকালুকি হাওর তীরের মৌলভীবাজার অংশের ৩ উপজেলায় নেই কোনো ন্যায্য মূল্যের দোকান। দু’দফা ত্রাণ বিতরণ হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গতকাল পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছায়নি সরকারি সহায়তা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় অনেকেই হতাশ। হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিদের সঙ্গে আলাপে এমনটিই জানালেন তারা। তারা জানিয়েছেন, হাওর তীরের কোনো উপজেলায় ন্যায্যমূল্যের দোকান বা ওএমএস’র দোকান এখনো চালু হয়নি। তাছাড়া স্থানীয় বাজার গুলোতেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। খুচরা বাজারে কোনো চালই কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার কম নেই। প্রতিদিনই ১০-১৫ সদস্যের পরিবারে ৪-৫ কেজি চালের প্রয়োজন। এছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তো রয়েছেই।

জেলা ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলার ৬৭টি ইউনিয়নের মধ্যে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৬০টি। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ২৪,৮৭১টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯,৭২৩টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১,২১,৬০৬ জন ও আংশিক ২,৫৮,৩৪৮ জন। মোট ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৪ জন। সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৮৯১টি ও আংশিক ৫,৯১০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮,৮৯৮ হেক্টর জমির বোরো ফসল। ৭০১ হেক্টর সবজি ফসল। মাছ মরেছে ২৫ টন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭-২৮ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন সবজি। তবে প্রতিদিনই এই ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ফসল হারানো দুর্গত মানুষদের জন্য জি আর ২০০ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩ মাস ৮ দিনের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ হাজার ভিজিএফ কার্ডের অনুকূলে ৯৮ টন চাল ও ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এই ১ হাজার কৃষক মাসে পাবেন ৩০ কেজি চাল আর নগদ ৫০০ টাকা। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৫০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা, ১০০০ বান্ডিল ঢেউটিনসহ ও আনুপাতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নে ওএমএস চালের অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল ইউনিয়নে সাদিপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ছত্তার মিয়া (৫৫), আাবুল হোসেন (৫৮) তাহির মিয়া (৬০), ইসমেত মিয়া (৩৮), জুনেদ আহমদ (৪৮), গণেশ চন্দ (৫৮), গোপী শীল (৬২), বাতির মিয়া (৪৮) জানান তারা প্রত্যেকেই নিজের কিংবা বর্গা নিয়ে ৩ বিঘা থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু একটি ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন শুনলাম সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলেদের চাল ও নগদ অর্থ দিচ্ছে। দুই একজনও পেয়েছে। কিন্তু এখনো তো আমাদের এলাকায় সবাই পায়নি। তাদের মত একই অবস্থা ৩ উপজেলার হাওর তীরের ক্ষতিগ্রস্তদের। পর্যাপ্ত ত্রাণ না থাকায় কেউ এ সহায়তা পাচ্ছেন আবার অনেকেই পাচ্ছেন না। কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের কয়ছর উদ্দিন জানান ২৬ বিঘা জমিতে তিনি বোরো ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু আগাম বন্যায় সব নিয়ে গেছে। সরকারি সাহায্য বলতে তাকে ইউনিয়ন থেকে ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে এনে ওজন করে দেখা যায় ১৭ কেজি ৪শ’ গ্রাম চাল হয়েছে। ৪ জনের সংসারে ১৭ কেজি চালে ২-৩ দিন চললো। এরপর কি করবেন?
ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ও ভাটেরা ইউনিয়ন অধিকাংশ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। মাত্র ৯ টন চাল তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। ১০ কেজি করে ১৮শ’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ৯শ’ জনকে দিয়েছেন। দ্রুত ওএমএস চালুর দাবি জানান তিনি। ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, দরিদ্র মানুষ, কৃষক ও জেলে মিলিয়ে ১৪শ’ জনকে সাড়ে ১৫ টন চাল ও ২২০ জনকে নগদ টাকা প্রদান করেছেন। তার ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, জেলায় ওএমএসের দোকান নেই। দোকান চালুর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছি। বিগত যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করার কথা। সেই নির্দেশনাও দেয়া ছিলো। ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের গাফিলতি ও স্বজনপ্রীতি না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=64285&cat=2/