২৬ অক্টোবর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:২২

পথহারা সেতুগুলো

বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কের খালের ওপর সাত কোটি টাকার সেতুর নির্মাণকাজ দুই-তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে। আরসিসি সেতুটির মাঝখানের অংশের কাজ হয়নি। জেলেদের দাবির মুখে কর্তৃপক্ষ মাঝ বরাবর উঁচু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সেতুর নকশা পাল্টাতে হবে।

মাঝ বরাবর করা হবে ইস্পাতের কাঠামো। এতে খরচও বাড়বে।

এদিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় চার বছর আগে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

তালতলীর ৭ কোটি টাকার সেতু

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কের খালে ওপর সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। আরসিসি সেতুটি ৭২ মিটার দীর্ঘ। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় সাত কোটি টাকা। কাজটি পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’।

২০২১ সালের শেষের দিকে তারা নির্মাণকাজ শুরু করে। এক বছরে সেতুর দুই পাশে মোট ৪৮ মিটার কাজ শেষ করে। তবে মাঝখানের ২৪ মিটার জায়গার উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলেন স্থানীয় জেলেরা। তাঁদের দাবি, খালে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে সেতুর মাঝখানের উচ্চতা রাখা হয়েছে মাত্র পাঁচ ফুট। এ কারণে সাগর থেকে আসা মাছ ধরার বড় ট্রলার স্বাভাবিক জোয়ারের সময় সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।

তাই জেলেরা সেতুর নকশায় পরিবর্তন করে মাঝের অংশ আরো উঁচু করার দাবি জানান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও জেলেদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ওই উচ্চতায় সেতুর মাঝের অংশ নির্মাণে আপত্তি জানায়। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বাভাবিক জোয়ারে যাতে সব ট্রলার চলাচল করতে পারে সে জন্য নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু এক বছরেও নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। এর মধ্যে কাজের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

গত শনিবার দেখা যায়, সেতু এলাকায় পর্যটকরা ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হচ্ছে।

টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও সমুদ্রসৈকতে আসা একাধিক পর্যটক জানায়, তারা ঘুরতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছে। বনের ভেতরে যেতে হলে খালটি পার হতে হয়। বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খেয়া পার হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থাকলে ইকোপার্কে পর্যটক আসবে না। তাই সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানায় তারা।

এলাকার বাসিন্দা মজিবর ফরাজী বলেন, ‘টেংরাগিরি ইকোপার্কের খালের ওপর একটি লোহার ব্রিজ ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় দুই বছর আগে ব্রিজটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু হয়। সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় আমরা গ্রামবাসী আপত্তি জানিয়েছি। কারণ সাগর ও খালের পানি বেড়ে যাওয়ার সময় এই সেতুর নিচ দিয়ে কোনো ট্রলার কিংবা নৌযান চলাচল করতে পারবে না। সেতুটির কাজ অসমাপ্ত থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এখানে আসা পর্যটক ও স্থানীয় মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আমির ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আমির হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।

তালতলী উপজেলা রেঞ্জ অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় কাজটি বন্ধ রয়েছে বলে শুনেছি। এ জন্য ইকোপার্কে পর্যটক কম আসে। তাই সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে।’

এলজিইডির বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জী বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে মন্ত্রণালয়ের একটি টিম এসেছিল। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের বলেছিল, সেতুটি নিচু হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আমাদের হেড অফিসকে সেতুর উচ্চতা বাড়াতে বলেছিল। আমার ডিজাইন হলো আরসিসি। আরসিসি দিয়ে ওই রকম বাড়াতে সমস্যা। এ ক্ষেত্রে মাঝখানে স্টিলের স্ট্রাকচার করা হবে। এ জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডকে পাওয়া গেছে। এখন ওদের সঙ্গে স্টিল স্ট্রাকচারের ডিজাইন নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি, দ্রুত এর কাজ শুরু হবে।’

এতে নির্মাণ খরচ আরো বাড়বে কি না জানতে চাইলে বরগুনার এলজিইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ব্রিজের খরচ আগের চেয়ে বাড়বে। নতুন ডিজাইন এলে বলা যাবে তা কত।’

টাঙ্গাইলে সংযোগ সড়কহীন অকেজো সেতু

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালপুর উপজেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঝাওয়াইলের মোহাইল গ্রামের গরিল্ল্যা বিলের মাঝে ৩৬ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ৩৭ লাখ টাকা খরচ হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির এক পাশের সংযোগ সড়ক নেই। অন্য পাশে সেতুতে ওঠার জন্য কিছু মাটি ফেলা আছে। দুই পাশে বিল। মোহাইল গ্রামের ব্যবসায়ী মহসিনসহ অনেকেই বলেন, কয়েক বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও তাঁদের কোনো কাজে আসছে না।

ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিলের মধ্যে সেতুটির দরকার আছে। তবে সেতুর দুই পাশে মাটি না থাকায় মানুষ চলাচল করতে পারে না। অকেজো হয়ে আছে সেতুটি।’

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর রেজাউল হক বলেন, ‘সেতুটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে করা। সেতুটি আমি দেখেছি। সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মাসুম বলেন, ‘আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে সংযোগ সড়ক মেরামত করা হবে, যাতে মানুষের যাতায়াতের জন্য উপযোগী হয়।’

 

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/10/26/1330316