২৫ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ৯:০২

পেশাদার অপরাধীরা বেপরোয়া

পুলিশ ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে

ঝালকাঠীর রাজাপুর থানা কার্যালয়ের সামনে খুলনা ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। থানার গেট থেকে তাকালে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দেখা যায়। অথচ গত শুক্রবার দুপুরের পর সেখানে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল দোকানে ঢুকে সব কিছু নিয়ে যায়। এ নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। মানুষের মুখে মুখে এই কাহিনী। এই দোকানে চুরির ঘটনা ঘটতে পারে সবার কল্পনারও বাইরে। গত ৩০ আগস্ট রাজাপুরের এসি ল্যান্ডের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। ১ সেপ্টেম্বর রাজাপুরের চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে। তিন দিন আগে নদীর পাড়ের এক বাড়িতে ঢুকে প্রতারক চক্র সব কিছু নিয়ে যায়। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন, যেসব ঘটনা ঘটছে তার অধিকাংশই থানার আশপাশে।

এভাবেই দেশজুড়ে চলছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং খুনের ঘটনা। একের পর এক এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে। অনেকেরই মন্তব্য হচ্ছে, পুলিশ ব্যস্ত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে। আর এই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পেশাদার সন্ত্রাসী ও অপরাধীচক্র। গত শুক্রবার গাজীপুর মহানগরীর বাঙ্গালগাছ বাঁশপট্টি এলাকায় দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত শফিকুল ইসলাম (৩২) ও শুক্কুর আলী (৩০) পেশায় পরিবহন শ্রমিক হলেও তাদের বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলেছে, নিহতদের সঙ্গে মাদক ব্যবসার টাকার লেনদেন নিয়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরোধ চলে আসছিল। তারা অভিযোগ করেন, নিহত দুই ভাই ও তাদের সহযোগীদের অত্যাচারে বাঁশ বাজারের ব্যাবসায়ীরা অতিষ্ঠ ছিলেন।

পুলিশ বলেছে, নিহতদের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তাদের হামলায় ওই বাঁশবাজার এলাকার শওকত নামের এক ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় রয়েছেন। ওই দুই ভাই একটি মামলায় গ্রেফতারের পর ২২ দিন জেল খেটে ১৪ অক্টোবর জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পায়।

ভুক্তভোগীরা বলেছেন, রাজধানীতে চাঁদাবাজি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের এক নেতা বলেছেন, চাঁদাবাজিতে হকাররা এখন দিশেহারা। দফায় দফায় তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়ালে দেখা যায় পরিবহনে চাঁদাবাজির দৃশ্য। রাস্তায় প্রকাশ্যে গাড়ি আটকে চাঁদার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজদের হাতে নিহতের ঘটনাও ঘটছে। রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী এলাকায় ওমর ফারুক (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীকে চাঁদাবাজরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, মিরপুরের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা এখন চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি। পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

রাজধানীতে ছিনতাইকারীরাও এখন বেপরোয়া। আব্দুল মান্নান নামের এক গাড়ি চালক বলেছেন, গত শুক্রবার রাতে কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। পথে কয়েক ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে বাহুতে ছুরিকাঘাত করে। দুর্বৃত্তরা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। এভাবেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

মোশাররফ নামের এক ব্যক্তি বলেন, পুলিশ এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সভা-সমাবেশ নিয়েই ব্যস্ত। দুর্বৃত্তদের দিকে তাদের কোনো নজর নেই। যে কারণে দুর্বৃত্তরা বেপরোয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক গোলযোগের সময় পেশাদার অপরাধীরা সচরাচর বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এই সময়ে তারা সুযোগ নেয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/786609