২৩ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার, ৬:২৯

চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সঙ্কটে মানুষের দুর্ভোগ চরমে

৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ : এলএনজি সরবরাহ কমেছে ৪ কোটি ঘনফুট

শীত না আসতেই বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট তীব্র রূপ নিয়েছে। মহেশখালী থেকে এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সঙ্কট তো আছেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে এলএনজির সরবরাহ ৪ কোটি ঘনফুট কমে গেছে। এর ওপর সামনে বোরো মৌসুম থাকায় বহুজাতিক কাফকো ও রাষ্ট্রায়ত্ত সিইউএফএল সারকারখানা দু’টিতে পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ দিতে হচ্ছে। ফলে বন্ধ রাখা হয়েছে তিনটি গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র।

 

এমনিতেই চাহিদার চেয়ে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের। যা মিলছে তা-ও চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ অনেকটাই আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু মহেশখালীতে স্থাপিত দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির (জাহাজের) রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য ড্রাইডকিং করতে গিয়েই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সূত্রমতে, দৈনিক ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাইপলাইনের মধ্যে আসার কথা থাকলেও বর্তমানে তা ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছিতে নেমে এসেছে। ফলে এত দিন পাইপলাইনে আসা এলএনজির মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট রেখে বাকিটা পাঠানো হতো। কিন্তু সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের জন্য এলএনজির বরাদ্দ কমেছে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এলএনজির পাশাপাশি গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গ্যাসের জোগান রয়েছে। ফলে সেখানে সঙ্কট তীব্র হয় না। কিন্তু চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরি এলএনজিনির্ভরতা চট্টগ্রামের মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে। দু’দিন ধরে তীব্র গ্যাস সঙ্কটে নাগরিকরা গাড়ি নিয়ে সিএনজি স্টেশনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বাসাবাড়ির দুরবস্থা তো আছেই।

গ্যাসের চাপ সঙ্কটের তীব্রতায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমে। গ্যাসের চাপ সঙ্কটে গত শনিবারও বিস্তীর্ণ এলাকার বাসাবাড়ির রান্নাবান্না প্রায় বন্ধই ছিল। ফলে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিকসামগ্রী যেমন রাইস কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদির ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় ও এসবের ব্যবহার মারাত্মক চাপ বাড়িয়েছে। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটে আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদু্যুৎ বিভাগ চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের জোগান মিলছে না।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী গতকাল রোববার চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পৃথক দু’টি ইউনিট, শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সরবরাহ দিতে না পারায় শাটডাউনে (বন্ধ) ছিল।
পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী গত রোববার চট্টগ্রামে ২৮৬.৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয় মাত্র ৩৮.৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া বহুজাতিক সারকারখানা কাফকো-কে ৪৪.৫ মিলিয়ন ঘনফুট, রাষ্ট্রায়ত্ত সিইউএফএলকে ৪২.৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আবাসিক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক গ্রাহক মিলে ১৫৩.৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সররবাহ দেয়া হয়।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিসিএল) অপারেশন ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, এমনিতেই সারা দেশে চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম। পাশাপাশি ভাসমান এলএনজি স্টেশনের একটির (জাহাজ) ড্রাইডকিংয়ের কারণে এলএনজির সরবরাহ কমেছে। চট্টগ্রামে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি পাম্প বন্ধ রাখা হচ্ছে। বাসাবাড়ির সরবরাহ পরিস্থিতি যাতে খারাপ না হয় সেদিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গ্যাস রেশনিং করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/786233