১০ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৩৭

রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসেই ক্ষয় হচ্ছে সোয়া বিলিয়ন ডলার

রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসেই ক্ষয়ে যাচ্ছে ডলার। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা চিহ্নিত করছেন, সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহায়তা। বিশেষ করে সরকারি কেনাকাটার দায় মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে প্রায় প্রতি দিনই সহায়তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ৩৭৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে, যা প্রতি মাসে সোয়া বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলার সঙ্কটের কারণে এক দিকে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছে না, অপর দিকে ডলারের দামও বেড়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে ৭ টাকা। গত বছরের অক্টোবর আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার পেতে যেখানে ব্যয় করতে হতো ১০৩ টাকা ৬২ পয়সা, চলতি বছরে তা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও এ দরে কোনো উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছে না। তাদেরকে ব্যয় করতে হচ্ছে আরো বেশি মূল্য। আর এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে যাচ্ছে। গত বছরের ৪ অক্টোবর বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ছিল যেখানে ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ২৬ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলার। যদিও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিট রিজার্ভ দেখাচ্ছে ২১ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরো কম বলে মনে করছে আইএমএফ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, প্রতি দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে যে পরিমাণ ডলার সরবরাহ করে, চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। প্রতি দিনের চাহিদার ২০ ভাগের এক ভাগও সরবরাহ করা হয় না। উচ্চ মহলের নির্দেশে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যন্ত্রাংশ আমদানি, বিপিসিরি জ্বালানি তেল, বিসিআইসির জন্য সারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। পণ্যও দেশে এসেছে। কিন্তু ডলারের সংস্থান করতে না পারায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু রিজার্ভ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আর আগের মতো চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। এতে বার বার বিদেশী ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার দায় মেটানোর কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারছেন না। এতে এক দিকে ব্যাংকগুলোর বাড়তি চার্জ গুনতে হচ্ছে, অপর দিকে বিদেশে ব্যাংকগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা হয়েছে। গত বছরের জুলাইতে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যেখানে প্রায় সাড়ে ২৩ শতাংশ, চলতি বছরের একই সময়ে তা না বেড়ে বরং প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৫ শতাংশ। এ হিসাবে প্রকৃতপক্ষে আমদানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। কিন্তু এর পরেও রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাচ্ছে না। বরং প্রতি মাসেই তা কমে যাচ্ছে গড়ে এক বিলিয়ন করে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর অন্যতম কারণ হলো বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া। এ দিকে চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় বিদেশে শ্রমিকরা আর আগের মতো বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন না। অপর দিকে নানাভাবে বাড়ছে মুদ্রা পাচার। বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার প্রতিবেদনেই তা উঠে আসছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ তলানিতে নেমে গেছে।

গত সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে ও কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় না আসলে রিজার্ভ আরো কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন। আবার এ অবস্থা থেকে উত্তরণেও তেমন কোনো পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। কারণ, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার প্রধান দুই শর্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর একটি হলো গত জুনের মধ্যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে রিজার্ভ রাখতে হবে, তা সংরক্ষণ করতে পারেনি। অপর দিকে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হয়নি। আবার আগামী মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর দুই মাসের দায় চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে, এতেও বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা। সবমিলে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/783074