৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ১:১৪

বৃষ্টি হলেই ঢাকায় যানজট

বৃষ্টি হলেই রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বৃষ্টিতে বারবার যানজট ও ঢাকাবাসীর ভোগান্তির কারণ রাস্তায় দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করতে হয় তাদের। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও আবাসিক এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েও বের হয়েছেন কাজের সন্ধানে। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষও ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পোহাতে হয়েছে ব্যাপক বিড়ম্বনা। কেউ ছাতা নিয়ে পায়ে হেঁটে, কেউবা বৃষ্টিতে ভিজেই পৌঁছেছেন গন্তব্যস্থলে। এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কে মানুষের উপস্থিতিও ছিল কম।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে পারে। শনিবার থেকে আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

পুরান ঢাকার লালবাগ চৌরাস্তায় দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে সড়কে মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হওয়া রিকশা শ্রমিকরা অধিকাংশই খালি রিকশা নিয়ে এদিক-ওদিক যাত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার রিকশা রাস্তার পাশে রেখে পলিথিন মুড়ি দিয়ে রিকশায় বসে ঝিমুচ্ছেন।

এক রিকশা চালক বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনে এমনিতেই রাস্তায় মানুষ নাই। আবার দুই দিনের বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না। রিকশা চালাইয়া যা ইনকাম হচ্ছে, তা দিয়ে গ্যারেজের জমা দেওয়ার পর তিন বেলা খাবারের খরচও ওঠে না।

ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা জানান, সরকারি চাকুরে এবং অন্যান্য ব্যস্ত মানুষেরা পুরো সপ্তাহের বাজার করেন শুক্রবারে। সেই হিসাব করেই একটু বেশি সবজি তুলেছেন তিনি। কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি একেবারেই কম। অন্য শুক্রবার দুপুরের আগেই অর্ধেকের বেশি সবজি বিক্রি করে ফেলি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে লোকজনের দেখা নাই।

জানা যায়, ঢাকার অনেক রাস্তা ভাঙা। কোথাও কোথাও আবার খানাখন্দ আছে। বৃষ্টির সময় এসব খানাখন্দে পানি জমে থাকার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরে ধীরে গাড়ি চালান তারা। আর রাস্তায় পানিবদ্ধতা তৈরি হলেও স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ যানজটে পড়তে হয় তাদের।

ট্রাফিক পুলিশ বলেছে, রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে আরোহীদের দাঁড়িয়ে থাকা, ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যানবাহন অচল হয়ে পড়া, রিকশা-অটোরিকশার অলিগলিতে ঢুকে পড়ার প্রবণতা যানজটের অন্যতম কারণ। গণপরিবহনের চালকেরা বলছেন, রাস্তার খানাখন্দের কারণে তারা স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে পারেন না। রাস্তায় পানি জমে থাকলে গাড়ি আটকে যায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন নাজুক ড্রেনেজ-ব্যবস্থার কথা।

এক বাস চালক বলেন, এই রুটে এলিফ্যান্ট রোড ও মালিবাগ এলাকার রাস্তায় ভাঙা এবং খানাখন্দ রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব তখন অন্য সড়কগুলোয় পড়ে। তখন দেখা যায় এক ঘণ্টার রাস্তা চার ঘণ্টায়ও পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয় না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঢাকার রাস্তায় বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করে। বৃষ্টি শুরু হলে মোটরসাইকেল রাস্তায় রেখে আরোহী কোথাও আশ্রয় নেন। এতে গাড়ি চলাচলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ভাঙাচোরা থাকায় বৃষ্টির সময় স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলতে পারে না। বৃষ্টির সময় তীব্র যানজটের পেছনে প্রকৌশলগত কিছু বিষয় আছে। এগুলো সমাধানের পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক-ব্যবস্থা কার্যকর করা না গেলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আর মানুষের সচেতনতা এখানে খুবই জরুরি। বৃষ্টির সময়ও ট্রাফিক আইন মানতে হবে। বৃষ্টির সময় রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করলে, সেটি অনেক চাপ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকার ড্রেনেজ-ব্যবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। এটি সুপরিকল্পিত নয়। বৃষ্টির পানি সড়কের দুই পাশে সরে গিয়ে ড্রেনে প্রবেশ করার কথা। পানি দুই পাশে সরে যাওয়ার জন্য মাঝখানে একটু উঁচু রাখা হয়। ঢাকার ড্রেনেজ-ব্যবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে বৃষ্টির সময় রাস্তার দুই পাশে পানি জমা শুরু হয়। এ সময় যানবাহনগুলো রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে করে রাস্তার যানচলাচলের সক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে যায়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকায় তীব্র যানজটের এটা অন্যতম কারণ।

নাজুক ড্রেনেজ-ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির সময় পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। ড্রেনেজ-ব্যবস্থার সঙ্গে খাল বা লেকের যে ‘কানেকটিভিটি’, খালের সঙ্গে নদ-নদীর ‘কানেকটিভিটি’ থাকার কথা, সেটি নেই। ফলে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

https://dailyinqilab.com/national/article/607857