৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৯

রাতের ঢাকায় জলাবদ্ধতা

কিছু এলাকায় জমে প্রায় হাঁটুসমান পানি। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

রাজধানী ঢাকার আকাশ গতকাল শুক্রবারও সকাল থেকেই ছিল মেঘলা। তবে এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে, তা দুপুর ১২টার পর। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

তবে এই বৃষ্টিতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকার হোসনি দালান, নাজিমউদ্দিন সড়ক, আলাউদ্দিন সড়ক, বকশীবাজার, বংশাল ও সিক্কাটুলি এলাকার প্রায় পুরোটাই ছিল পানির নিচে। এসব এলাকার কোনো কোনো অংশে জমে প্রায় হাঁটুসমান পানি। এমন জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের বিপরীতে কাদের আর্কেড, খান প্লাজা, গ্লোব শপিং সেন্টার, নুরজাহান সুপার মার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনের রাস্তায় প্রায় হাঁটুপানি। নুরজাহান ও ধানমন্ডি হকার্সের সামনের কিছু স্থানে ফুটপাতও পানিতে ডুবে গেছে।

জলাবদ্ধতার কারণে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে বসে ছিলেন। বিপণিবিতানে ক্রেতার উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলক কম। রাস্তায় পানি জমে থাকায় সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত অংশে ছিল যানজটও।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টিতেও নিউমার্কেট এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এক রাতের ওই বৃষ্টির কারণে পরদিনও এলাকাটি ছিল জলমগ্ন। পানি জমে থাকায় ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি বিঘ্নিত হয়।

নুরজাহান সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সামিউল ইসলাম বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারেই সবচেয়ে বেশি বেচাবিক্রি হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তেমন ক্রেতা নেই। যাঁরা আসছেন, রাস্তায় পানি থাকায় গাড়ি বা রিকশা থেকে নেমে তাঁরা মার্কেটে ঢুকতে পারছেন না।

বিকেল পাঁচটার দিকে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় গিয়েও জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কার্যালয়, হোসনি দালান সড়ক, নাজিমউদ্দিন সড়ক, আলাউদ্দিন সড়ক, বকশীবাজার, বংশাল ও সিক্কাটুলি এলাকার অলিগলি এবং মূল রাস্তা ছিল জলমগ্ন।

হোসনি দালান এলাকার বাসিন্দা রাসেল খান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় পানি জমে যায়। সেই পানি ১০-১২ ঘণ্টায়ও নামে না। বৃষ্টি হলে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জুমার নামাজের আগে হওয়া কিছুক্ষণের বৃষ্টিতে পানিটা জমেছে। কিছু এলাকায় বাসাবাড়ির নিচতলায়ও পানি ঢুকে গেছে। এ সময় জমে থাকা পানির কারণে রাস্তার পাশে থাকা দোকানগুলো বন্ধ করে রাখতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের।

বকশীবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল বাছেদ বলেন, টানা অনেকক্ষণ ভারী বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকবে—এমনটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টি হলেই যে জলাবদ্ধতা হয়, এ জন্য অবশ্যই সিটি করপোরেশন দায়ী। নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করলে পানি নেমে যাওয়ার রাস্তা থাকত।

গতকালের বৃষ্টিতে যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের অবস্থান এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশন হয় কয়েকটি ওয়ার্ডের সীমানা অতিক্রম করে। এতে পানি নামতে সময় নেয়।

জলাবদ্ধতা সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পানি জমবেই। সেই পানি সরে যাওয়ার পথ আছে কি না, সেটা হচ্ছে বিষয়।’

ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে এমন অবস্থা কোথাও দেখেননি দাবি করে দক্ষিণ সিটির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পানির গতি আর বিদ্যুতের গতি এক নয়। পানি নিচের দিকে গড়ায়; এটাকে তো বাধ্য করা যায় না। আমরা সিস্টেম করে দিয়েছি, সেদিক দিয়ে পানি আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামে।’

এদিকে সন্ধ্যার পর রাজধানীতে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। এতে ওই সব এলাকায় জলাবদ্ধতা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এ ছাড়া আরও কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাত ১১টার দিকে দেখা যায়, ধানমন্ডি ২৭–এর মোড়, সংসদ ভবনের উল্টো দিকের সড়ক, আড়ংয়ের সামনে থেকে আসাদগেট পর্যন্ত সড়কের এক পাশ ও মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকা পানির নিচে।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/o8dhfv107a