৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ১২:৫৬

টানা বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় নাকাল রাজধানী

আজও থাকবে বৃষ্টি, কমতে পারে কাল থেকে

মৌসুমি বায়ু ও লঘুচাপের মিলিত প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবারও তা অব্যাহত ছিল। টানা মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ডুবে যায় অনেক সড়ক। এতে দেখা দেয় তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। বিশেষ করে শুক্রবার রাতে কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টিতে ভেসে যায় রাজধানীর অলিগলি। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের সীমাহীন কষ্ট হয়। ছুটির দিন ও বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল কম। গাড়ি না পেয়ে অনেকে ছাতা মাথায় হেঁটেই রওয়ানা দেন গন্তব্যে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঢাকায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোতেও টানা বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার ফরিদপুরসহ কয়েকটি জেলায় ঝড়ও হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে শুক্রবার ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানে এদিন ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও (আজ) বৃষ্টি থাকবে। তবে রোববার (কাল) থেকে বৃষ্টি কমে যাবে।

সরেজমিন রাজধানীর কুড়িল, বাড্ডা, গুলশান, মালিবাগ, রাজারবাগ, মহাখালী ও মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে যানজট দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মব্যস্ত মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে অনেকের হাতে কাজ নেই। কেউ কেউ বৃষ্টি মাথায় নিয়েও বের হয়েছে কাজের সন্ধানে।

এদিকে বৃষ্টির মধ্যেই রাজধানীর কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মিরপুর, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, খামারবাড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। শুক্রবার রাতে রাজধানীর ওইসব এলাকার সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধ এসব সড়কে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেক যাত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে ভোগান্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।

ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ডেমরা ও আশপাশের এলাকায় নিম্নাঞ্চলসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে সড়কের দুপাশের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েন। ড্রেনের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ডেমরার মাতুয়াইল মুসলিম নগর, বাদশাহ মিয়া রোড, ডগাইর ফার্মের মোড়, ছোট মুরগির ফার্ম, পূর্ব ডগাইর, বড়ভাঙা, কোদালদোয়া গ্রীনসিটি এলাকা, নলছাটা, ধিৎপুর, খলাপাড়া, মেন্দিপুর, শূন্যা টেংরা ও আমুলিয়ার নিম্নাঞ্চলে অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। ডগাইর বাজার এলাকার বাসিন্দা মেহেদি হাসান যুগান্তরকে বলেন, সড়কের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাফেরা করেছি। আমাদের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

মিরপুর প্রতিনিধি জানান, মিরপুর ১, ২, ১০, কালশী, মিরপুর ২ নম্বর হাজী রোড, প্যারিস রোড, মিরপুর ১২ নম্বর বি ব্লক, বাইশটেকি, মিরপুর ১১ এভিনিউ ফাইভের বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছে। প্যারিস রোড ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে আশাপাশের বাসা বাড়ি, বিহারি ক্যাম্পসহ দোকানপাটেও পানি প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা রয়েছে যেগুলো পরিকল্পিত। বাকি ৭০ ভাগ এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেসব এলাকার রাস্তাঘাটগুলো ভাঙা ও পানির মান খারাপ এবং গ্যাস সংকট দেখা যায়। এই এলাকাগুলোকে টার্গেট করে দেওয়া হয় লোডশেডিং। এতে রাজধানীতে বসবাস করা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়।

শুক্রবার সকালে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পূর্ব-উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সতর্কবার্তায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরের নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

কেন অবিরাম বৃষ্টি : আবহাওয়া গবেষকরা জানিয়েছেন, কয়েকটি কারণে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রথমত, দেশের স্থলভাগে বর্তমানে দুটি স্থানে নিম্নচাপ একত্র হয়ে প্রচুর জলীয়বাষ্প ও বাতাস টেনে নিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, বঙ্গোপসাগরে ভারত মহাসাগর দ্বিচক্রআইওডি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার সময়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে বিপুল পরিমাণে মেঘ জড়ো করছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, মৌসুমি বায়ুর বিদায়বেলায় সাধারণত বৃষ্টি বেড়ে যায়। এবার স্থল নিম্নচাপ এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বৃষ্টি বেড়ে গেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/725906