৬ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৫৮

রংপুর অঞ্চলে আলুর বীজ সংকটের শঙ্কা

উৎপাদন কমে গেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে

রংপুর অঞ্চলে আলুর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পর এবার আলুর বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষক। তারা ধারণা করছেন, বীজ সংকটের কারণে এবার আসন্ন মৌসুমে অনেক কৃষকই আলুর আবাদ করতে পারবেন না। এতে চাহিদামতো বীজ না থাকায় এই অঞ্চলে আলুর উৎপাদন কমে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। তবে হিমাগার মালিকরা বলেছেন, হিমাগারে প্রচুর বীজআলু আছে। বীজআলু নিয়ে কোনো সংকট হবে না।

হিমাগার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ৪৩, দিনাজপুরে ১৫, গাইবান্ধায় ৬, কুড়িগ্রামে ৫, লালমনিরহাটে ১২, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০ ও পঞ্চগড়ে ১০টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার যেভাবে আলু ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে তাতে অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে বীজআলুও বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার আশায় বীজআলু মজুত করেও রেখেছেন।

রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রতিবছর ১ লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। মোট আবাদের ৩০ শতাংশ আলু বীজের প্রয়োজন হয়। রংপুর অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনের মতো বীজের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বিএডিসি সরবরাহ করতে পারে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন। বড়-বড় কৃষক বীজ আলু নিজেদের সংগ্রহে রাখলেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বীজআলু ব্যবসায়ী পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হয় কৃষকদের।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার আলুর দাম বৃদ্ধির ফলে অনেকে লাভের আশায় বীজআলুও বিক্রি করে ফেলছেন। আবার অনেকে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের ভয়ে হিমাগার থেকে বীজআলু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যেই রংপুর, নীলফামারীসহ এই অঞ্চলের অনেক স্থানে আগাম আলু রোপণ করা শুরু হলেও দুই সপ্তাহ পর পুরোদমে আলু রোপণের কাজ শুরু হবে। এ সময় বীজ নিয়েও আলুর মতো কেলেঙ্কারি শুরু হতে পারে। এমনটা মনে করছেন সাধারণ কৃষক।

রংপুর নগরীর তামপাটের কৃষক আশরাফুল আলম, পীরগাছার জাহাঙ্গীর আলম ও সদরের জানকী রামজীবনের মনজুরুল ইসলাম বলেন, আলুর নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে যাওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রতি মৌসুমে ৬০-৭০ টাকা কেজিদরে বীজআলু ক্রয় করলেও এবার কত দামে ক্রয় করতে হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

নগরীর সাতমাথা বীরভদ্র বালাটারি এলাকার সুজন পাটোয়ারী ও আফজাল হোসেন বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি চাহিদা অনুযায়ী আলুর বীজের ৫ থেকে ৬ শতাংশ সরবরাহ করা হয়। যা নিয়েও দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। বাকি আলু বীজ স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করেন কৃষক। কয়েকজন কৃষক বলেন, চাহিদামতো বীজ না পেলে আলুর আবাদ কমে যাবে।

আবাদ কম হলে আবারও বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসি রংপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক (বীজ বিপণন) মো. মাসুদ সুলতান যুগান্তরকে বলেন, বিএডিসি রংপুর অঞ্চলে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত বীজ আলু সরবরাহ করতে পারে। তবে বীজের সংকট হবে না বলে তিনি মনে করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/725625