৬ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৩১

গোপালের নাতি-নাতনিদের মিছিল

-ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

সকালে বাজারে গেলে দোকানে দোকানে ঠক্কর খেতে খেতে বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে যায়। কচুর লতি আশি টাকা, ঢেঁড়শ একশ টাকা, গাজর, টমেটো একশ বিশ টাকা, শসার কেজি সত্তর টাকা, কাঁচা মরিচ আর ওজন করে চাইনি বললাম ২০ টাকার মরিচ দেন। পাঁচ আঙ্গুলে তুলে কিছু কাঁচা মরিচ ব্যাগে দিয়ে দিলো। একটা ছোট্ট চাল কুমড়া সত্তর টাকা। লাউ আশি থেকে একশ টাকা। কিছুই কেনা হয় না। কিন্তু খেতে তো হবে। সিমের কেজি একশ আশি টাকা। গতকাল বাজারে ফুল কপি, বাঁধা কপি দেখিনি। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও পটলও নাগালের বাইরে। সব কিছু বাদ দিয়ে কেজি খানেক ওজনের একটা ইলিশ মাছ কেনার কথা ভাবলাম। এই মৌসুমে একটিও ইলিশ মাছ কেনা হয়নি। আমার ছেলে-মেয়ে বড়। ইলিশ মাছের বায়না ধরেনি। সরকার দেশের বাজারের খবর রাখে না। কোলকাতায় পাঁচ হাজার টন ইলিশ রফতানি করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ কলকাতায় বাংলাদেশের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ লিখেছেন এবার ইলিশ খেতে আমাদের কলকাতায় যেতে হবে। তাই কোনো রকম দরদাম না করে মাছ ওয়ালাকে বললাম এক কেজির একটা ইলিশ তুলে দাও। সব সময় এর কাছ থেকে মাছ নেই। সে একটা মাছ তুলে দিল।

মাথা দিয়ে ঘাম ছুটে গেল। বাসায় ফিরে রান্না ঘরে খালি ব্যাগ নামিয়ে দিলাম, তখনই মিরপুর রোড থেকে রেকর্ডকৃত আওয়ামী সঙ্গীত শুনতে পেলাম। জয় বাংলা বাংলার জয়। শুনতে ভালই লাগছিল। মিছিলের সাথে ঢাক-ঢোল ছিলো। ভাবলাম বিশাল মিছিল এসেছে। বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম মিছিল বলতে তেমন কিছু নেই। গান আর ঢাক-ঢোল রয়েছে। মিছিলের সামনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও সাদা টুপি পরা পাঁচ-ছয়জন বয়স্ক লোক। তাদের পেছনে বস্তিবাসী আট দশজন নারী। তাদের পেছনে গোপাল ভাঁড়ের নাতি-নাতনিদের মতো অর্ধনগ্ন শিশু হাত পা ছুড়ে কি যেনো বলছে।

ভাবছিলাম আজকে আবার কিসের মিছিল শেখ হাসিনা লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসবেন বলে হয়তো আওয়ামী লীগের পাতি নেতারা এ ধরনের মিছিল বের করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা তো চার তারিখ আসছেন বলে শুনিনি। এর পেছনে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। মিছিল যতই হাস্য-রসাত্মক হোক কিন্তু এর পেছনে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ছিলো। অথচ রাস্তার পাশ দিয়ে দিব্যি দুই লেনে গাড়ি চলাচল করতে পারতো। কিন্তু টোকাইদের মিছিল দেখে যান-বাহনগুলো সমীহ করছিলো।

তখনই গলির ভেতর থেকে একই সুরে গান ও ঢাকের শব্দ আসছিলো। মিরপুর রোডে তাতানো রোদ। কিন্তু গলির ভেতরে বিল্ডিং-এর ছায়া। সেখানে দেখলাম কিছু তরুণ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আমড়া পেয়ারা খাচ্ছে। যার সাধ্য আছে সে খাচ্ছে থাই পেঁপে। টক টকে লাল। আপেল মালটা অনেক দাম। সেগুলোর হয়তো ক্রেতা আছে। কিন্তু ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা তরুণরা তার ক্রেতা নয়। কলার হালি চল্লিশ টাকা। তার ক্রেতাও কম।

শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে তাকে সংবর্ধনা দেবার বহুবিধ কারণ আছে। তিনি আমেরিকায় বসে আমেরিকার বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। এতো বড় কথা এই পৃথিবীতে কোনো সরকার প্রধান আমেরিকাকে বলার ক্ষমতা রাখে না। তিনি সে দেশেই তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদের ব্যাপারে কথা বলেছেন। এমন একটি বহুল প্রচলিত আছে যে, সেখানে জয়ের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ সমস্ত কথা বার্তার অবসান ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জয় এদেশে (যুক্তরাষ্ট্র) লেখাপড়া করেছে, বিয়ে করেছে, তার একটা মেয়েও আছে। এখানে তার বাড়িঘর আছে, ব্যবসা বাণিজ্য আছে। তারপরেও মার্কিন সরকার যদি তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে চায়, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের তো বাংলাদেশ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের কি কি ব্যবসা আছে, সেটি জানা যায় না। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। তাতে সালমান এফ রহমান বলছিলেন যে, একটি ফাইলের অনুমোদন দরকার। ফাইলটি জয় সাহেবের ব্যবসায়িক ফাইল। পরে ডয়েচে ভেলের খালেদ মুহিউদ্দীন জনাব সালমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জয় সাহেবের কোথায় কি ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর কোনো উত্তর জনাব সালমান দিতে পারেননি। এদিকে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, রোজ শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। এমনিতেই সময় হয়ে গেছে বয়স তো ৮০’র উপরে তার মধ্যে অসুস্থ এখানে এতো কান্নাকাটি করে লাভ নেই। তাঁর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে এতো আদিক্ষেতা কেন?

এখন সারা বিশ্ব বাংলাদেশের জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বার বার বলছে বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাধামুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। উপরন্তু এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সাথে যারা অন্তরায় হবে তাদের সবার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে। তারা সে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগও শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ের সেলফি নিয়ে আওয়ামী লীগে ব্যাপক উচ্ছ্বাস বয়ে গেছে। এটা নিয়ে অনেক ছেলেমানুষি হয়েছে।

পৃথিবীতে যে যাই বলুক শেখ হাসিনার ‘নিরঙ্কুশ ক্ষমতা’ সোনার হরিণ চাই-ই চাই। এখন দেশব্যাপী সে আয়োজন চলছে। ‘শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার।’ কিন্তু গোপাল ভাঁড়ের নাতি নাতনিদের দিয়ে কি সে সরকার আনা যাবে।

https://www.dailysangram.info/post/537259