৩ মে ২০১৭, বুধবার, ৯:৩১

বাক স্বাধীনতা খর্ব করতে খড়গহস্ত সরকার : অ্যামনেস্টি

স্বাধীন মত প্রকাশের সুরা দিতে ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বাক স্বাধীনতা খর্ব করতে খড়গহস্ত বলে দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করে। বিডি নিউজ।
ইস্ট লন্ডনের একটি হোটেলে এ প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে অ্যামনেস্টির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্লগার সিনথিয়া আরেফিনও ছিলেন।
‘ভয় আর দমন-পীড়নের ফাঁদে বাংলাদেশে বিরুদ্ধ মত’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের মূল সুর হচ্ছে, উগ্রবাদীদের হামলা আর হুমকির ভয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ বাংলাদেশে কমে এসেছে। সরকার তাদের সুরা দেয়ার বদলে উল্টো নানা কৌশল ও আইনের বেড়াজালে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে চলেছে।
এই দুই মিলিয়ে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন অনেক সঙ্কুচিত বলে উপসংহার টেনেছেন অ্যামনেস্টির বাংলাদেশবিষয়ক গবেষক ওলফ ব্লোমকভিস্ট।

‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের হামলা ও হুমকি এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রব এখন নীরব।’
হামলা ও হুমকির মুখে পড়া ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিকদের সুরা দেয়ার বদলে তাদের দায়ী করে বাংলাদেশ সরকার উল্টো অপরাধীদের মদদ জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে অ্যামনেস্টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হলেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশে এক ধরনের স্বাধীনতা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গত কয়েক বছরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে মাত্র একটির বিচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেটি হলো ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের বিচার, যেখানে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আটজনের সাজা হয়েছে।
উগ্রবাদী হামলা কিংবা হুমকির মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চেয়েও না পাওয়ার কথা অ্যামনেস্টিকে বলেছেন ব্লগারেরা, যাদের কেউ কেউ নিরাপত্তার স্বার্থে দেশ ছাড়ার কথাও জানিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গণমাধ্যমে তার সমালোচনা ঠেকাতে নানা হস্তেেপর পাশাপাশি কালাকানুনও ব্যবহার করছে।

ব্লোমকভিস্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকতার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছে যেন এটা একটা অপরাধ। তাদের জেলে পুরছে, হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে, তাদের কাজে হস্তপে করছে। বিরুদ্ধ মত দমনে যা যা করা দরকার, তার সবই সরকার করছে।
উদাহরণ হিসেবে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলার কথা উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংগঠনটি। শফিক রেহমানকে বন্দি করার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি। অ্যামনেস্টি বলছে, বাংলাদেশ সরকার এখনো পুরনো ঔপনিবেশিক আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
সমালোচনা বন্ধ করতে বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগেও উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।
ব্লোমকভিস্ট বলেন, ‘বাংলাদেশে এ দমন-পীড়ন অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।’ প্রাথমিক পদপে হিসেবে যারা হুমকির সম্মুখীন, তাদের নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এরপর নিবর্তনমূলক আইনগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছে তারা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/216945