৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮:০৪

রাজধানীতে ধনীর দুলালের প্রাইভেটকারের ধাক্কা

রিকশাচালক হাবিবের কষ্টের দিনরাত

বাড়িতে শয্যাশায়ী হাবিবুর রহমান
রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের পরিবারে সদস্য পাঁচজন। তাঁর উপার্জনেই চলে সংসার। উপার্জন যা করতেন, তা থেকে সঞ্চয় করার সুযোগ ছিল না। প্রাইভেটকারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। এ অবস্থায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম। একদিকে স্বামীকে সুস্থ করে তোলা, অন্যদিকে ছেলেমেয়ের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার চিন্তা।

শুক্রবার মোবাইল ফোনে সমকালের সঙ্গে কথা বলার সময় রহিমা বেগম অসহায়ত্বের কথা জানান। বলেন, স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই খুব কষ্টে দিন কাটছে তাদের। গত রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় আহত হন হাবিব ও তাঁর রিকশায় থাকা শিশুসহ তিন যাত্রী। মঙ্গলবার পাশের বাসার এক নারী রহিমাকে দুই আঁটি লাল শাক কিনে দিয়েছিলেন। ঘরে দুই কেজি চাল ছিল, তা থেকে মঙ্গলবার এক কেজি রান্না করেছিলেন।

পরদিন বাকি চাল রান্না করেন। তরকারি ছিল না, শুধু ভাত খেতে হয়েছে তাদের। এভাবে খেতে চাচ্ছিল না ৯ বছরের মেয়েটা। তাদের এ অবস্থা দেখে বৃহস্পতিবার আরেক প্রতিবেশী দেড় কেজি চাল, এক কেজি আলু এবং আধা লিটার সয়াবিন তেল কিনে দেন। চাল-আলু দিয়ে দু’দিন চালিয়েছেন। এসব কথা বলার সময় গলা ধরে আসে রহিমা বেগমের।

তিনি বলেন, ‘যার মুখের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি, সেই মানুষ আজ বিছানায়। আমিও প্রায়ই অসুস্থ থাকি। বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করে সংসার চালাব, সে অবস্থায় আমি নেই। এখন মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকি। এই ক’দিন ধরে মানুষ যা দিচ্ছে, তাই কোনোরকম ছেলেমেয়ের মুখে তুলে দিতে পারছি। প্রতিবেশীরাও যে ধনী, তা নয়। কদিনইবা দেবেন তারা! সবকিছুই যেন অন্ধকার দেখছি।’

পরিবার নিয়ে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে ৩ হাজার টাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন হাবিব। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। বেশির ভাগ সময় রিকশা চালিয়ে রাতে বোর্ডবাজারের বাসায় যেতেন, ভোরে ঢাকায় চলে আসতেন ফের প্যাডেলে পা রাখার জন্য। মাঝেমধ্যে মোহাম্মদপুরে একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন।

গত রোববার রাতে দুর্ঘটনার পর হাবিবকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং আহত রিকশাযাত্রী প্রকৌশলী ইমরান রেজা ও ব্যাংকার আফরোজা আহমেদ তিন্নাকে শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইমরান-তিন্না দম্পতির তিন বছরের মেয়ে এনায়া রেজা আরোয়া সামান্য আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। ইমরান ও তিন্নাকে পরদিন গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিন্না চিকিৎসাধীন। ইমরান হাসপাতাল ছেড়ে ইকবাল রোডের বাসায় ফিরেছেন।

হাবিবের স্ত্রী রহিমা জানান, তিন সন্তানকে বাসায় রেখে তাঁর হাসপাতালে থাকা সম্ভব ছিল না। তাই সোমবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে স্বামীকে বোর্ডবাজারের বাসায় নিয়ে যান। পরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১ হাজার ৬৫০ টাকার ওষুধ কিনেছিলেন। সেই ওষুধ ও হাসপাতাল থেকে দেওয়া ওষুধেই চলছে এখনও। তবে গতকাল হাবিবের বুকের ব্যথা খুব বেশি হয়েছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন প্রায় সময়। তাই তাঁকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। হাবিবের মাথা, বুক, হাত ও পায়ে আঘাত লেগেছে।

রিকশাকে প্রাইভেটকারের ধাক্কা দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। হাবিব রিকশা চালিয়ে রাস্তার একপাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকার সেটিকে ধাক্কা দিয়ে ফুটপাতে উঠে যায়। লোকজন গাড়ির চালক ১৫ বছরের শাহরিয়ার হাসান ও পাশের সিটে থাকা সালমান হায়দারকে আটক করে। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাদের। এ ঘটনায় আহত যাত্রী ইমরানের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় শাহরিয়ারকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ও সালমানকে কারাগারে পাঠানো হয়।

রফিকুল ইসলাম গতকাল সমকালকে জানান, তাঁর পুত্রবধূ তিন্নার অবস্থা ভালো নয়। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইমরান একটু সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার বাসায় নেওয়া হয়েছে। তবে একা উঠে দাঁড়াতে পারছে না।

https://samakal.com/bangladesh/article/2309198782