৩ মে ২০১৭, বুধবার, ৯:২৬

কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে বহুপক্ষীয় আলোচনার ওপর জোর দিলেন এরদোগান

ভারত সফররত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে বহুপাক্ষিক আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এ সংক্রান্ত বিবৃতি ভারতের পক্ষে সমস্যা হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ, ভারত বরাবরই মনে করে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বড় জোর এটি দ্বিপক্ষীয় সমস্যা।
পাকিস্তান সবসময় ওই ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষকে শামিল করার চেষ্টা করলেও ভারত তাকে নাকচ করে দিয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলেন, ‘এটা সর্বজনবিদিত যে কাশ্মীর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়।’ ভারত ওই ইস্যুটি তুর্কি কর্তৃপক্ষের সামনে উত্থাপন করবে কী না সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

রোববার সন্ধ্যায় দুই দিনের ভারত সফরে আসেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। দিল্লী বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় গোয়েল। তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ভারত সফরের আগে সংবাদ সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের স্বার্থে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এটি রেখে যাওয়া উচিত নয় যাতে তারা হয়রানির মধ্যে না পড়ে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব জুড়ে সংলাপের পথ খুলে রাখার চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প হতে পারে না। যদি আমরা বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে পারি তাহলে আমাদের ভালো ইতিবাচক ফল মিলতে পারে।’
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান দুটোই তুরস্কের ভালো বন্ধু এবং তারা কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য সকল পক্ষের মধ্যে আলোচনা প্রক্রিয়া মজবুত করতে সাহায্য করতে চায়।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, কাশ্মীরে আরো মানুষের হতাহত হতে দেয়া উচিত নয়। বহুপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে আমরা শামিল হতে পারি। আমরা ওই ইস্যু একেবারে চিরতরে সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে এতে আমি খুব খুশি। কিন্তু আমি খুব দুঃখিত যে ৭০ বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও দু’দেশের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বিতর্কের সমাধান হয়নি।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বছর কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরে এসেছিলেন। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারত সফর করছেন। তার সঙ্গে সিনিয়র মন্ত্রী এবং ১৫০ সদস্যের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল রয়েছেন যারা ভারত-তুরস্ক ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেবেন।

পারমাণবিক শক্তি সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে তুরস্ক পাশে দাঁড়াবে বলে নয়াদিল্লী দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গে এরদোগানের অবস্থান ভারতের পক্ষে অস্বস্তির হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে কাশ্মীর নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে লেগে থাকা দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাতে এ খবর জানানো হয়েছে।
নিজের দেশে বিতর্কিত গণভোটে জয়ের পর এই প্রথম দুই দিনের সফরে ভারত এসেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। ভারতে পা দেয়ার আগে এক সংবাদমাধ্যমকে এর;োড়াস বলেছেন, ‘কাশ্মীরে আর রক্তপাত হতে দেওয়া যাবে না। বহুস্তরীয় আলোচনার মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধানে আমরা আলোচনায় অংশ নিতেই পারি।’ একই সঙ্গে তার বক্তব্য, তুরস্ক পাকিস্তানেরও মিত্র দেশ। তাই তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতায় আগ্রহী।

স্বাভাবিকভাবেই এরদোগানের কাশ্মীরে মধ্যস্থতার প্রস্তাব তার সফরে ছায়া ফেললেও তা সঙ্গে সঙ্গেই খারিজ করে দিয়েছে ভারত। তবে প্রকাশ্যে ভারতীয় প্রশাসন এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রমতে, এর আগে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আমেরিকার মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারত সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিল। দিল্লির বক্তব্য, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীরের যে অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে, তা মুক্ত করার জন্য ভারত ইসলামাবাদের সঙ্গেই আলোচনা করবে। এ নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এরদোগানের মন্তব্যকে কোনো গুরুত্ব দিতে নারাজ বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে দুদেশীয় অস্বস্থির মধ্যেই এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার নানা বিষয় নিয়ে সেই বৈঠক কথা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্রে বলা হয়েছে। সন্ত্রাসদমনে দুই দেশ হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে। আর্থিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়টিও বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানা গেছে।

http://www.dailysangram.com/post/282216