২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:০৯

গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‌্যাংকিং

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পেয়েছেন ‘ডি গ্রেড’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‌্যাংকিংয়ে গভর্নর হিসেবে ‘ডি গ্রেড’ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যেখানে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অকার্যকর ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হলে সেটির গভর্নরকে র‌্যাংকিংয়ে আনা হয়েছে ‘এফ’ গ্রেডের অধীনে।

১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের গ্রেডিং করে আসছে ম্যাগাজিনটি। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের সুরক্ষা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত করার মতো বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করেই এই গ্রেডিং করা হয়। এসব বিষয়ে যে গভর্নর যত ভালো করেন, তিনি তত ভালো গ্রেড পান। ১০১টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ম্যাগাজিনটি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সব ক’টি সূচকে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে প্রতিবেশী ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ পেয়েছেন ‘এ প্লাস’ গ্রেড। ‘এ মাইনাস’ গ্রেড পেয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়াত্ব ও ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে। আর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারী পেয়েছেন ‘বি মাইনাস’ গ্রেড।

গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় দুর্বলতাকে অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রণকেই বড় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের লক্ষ্যকে ছাড়ালেও এ অতিরিক্ত হার সীমিত ছিল দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্টে। স্থিতিশীল ছিল টাকার বিনিময় হারও। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়ন হয় সাড়ে ৯ শতাংশ। ডলার সঙ্কটে হিমশিম খেতে থাকেন পণ্য আমদানিকারকরা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতিও হয়ে ওঠে লাগামহীন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতির মতো বাহ্যিক ধাক্কার মুখে নাজুক অবস্থানে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সাময়িকীটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের করোনা-পরবর্তী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি হলেও টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। তবে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। তখন আমদানিকারকরা ডলার ঘাটতির সাথে লড়াই করেছেন। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্য ব্যয় বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা চাওয়া হয়।

প্রতিবেদনে শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেউলিয়াত্ব ও ইতিহাসের নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ গত মাসেও দেশটি মূল্যস্ফীতির হার নামিয়ে এনেছে ২ দশমিক ১ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির বড় অনুঘটক খাদ্যপণ্যের দামও এখন কমছে দেশটিতে। শ্রীলঙ্কার এ ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে বড় কৃতিত্ব দেয়া হয় সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কার (সিবিএসএল) গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহেকে। যদিও গত বছর দায়িত্ব নেয়ার পর বড় একটি সময় তাকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্যোগজনিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের র‌্যাংকিংয়ে গভর্নর হিসেবে তাকে দেয়া হয়েছে এ মাইনাস। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য হলোÑ রাজাপাকসে পরিবারের বিরাগভাজন হয়ে ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছেড়েছিলেন নন্দলাল বীরাসিংহে। দেশটির দুর্যোগের মুহূর্তে ২০২২ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরে আসেন তিনি। পদোন্নতি পান গভর্নর হিসেবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ নিতে থাকেন তিনি। দুই মাসের মধ্যেই তিনি শ্রীলঙ্কার সুদহার বাড়ান ৭০০ বেসিস পয়েন্ট। অর্থনীতির ক্ষত পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে গত মার্চে আইএমএফের ছাড় করা ৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট। গত মে মাসেও দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ২৫ শতাংশ। দুই মাসের মধ্যে জুলাইয়ে তা ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয় শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও এখন বেশ নাজুক। গত বছরের জুন শেষে দেশের রিজার্ভ ছিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে) চার হাজার ১৮২ কোটি বা ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবায়ন পদ্ধতিতে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফের শর্তের ভিত্তিতে এখন রিজার্ভের পরিসংখ্যান প্রকাশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডও (বিপিএম৬) অনুসরণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের হিসাব অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ এখন মাত্র ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। তবে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নিট রিজার্ভ এর চেয়েও অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার কম।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/780202