২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৯:৫৮

ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতির জন্য দুই সিটি করপোরেশন দায়ী

-তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ

এ বছর যথাযথভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কোথাও গড়ে ওঠেনি। ফলে অস্বাভাবিক হারে মশা বেড়েছে। এ মুহূর্তে মশা মেরে নিয়ন্ত্রণ করার পরিস্থিতি নেই। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করার মতো পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ বৃষ্টি কমলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মশা কমবে। ফলে নভেম্বর থেকে ডেঙ্গু কমতে পারে।

দুই ধরনের এডিস মশাই ডেঙ্গু ছড়ায়। তবে এডিস মশার মধ্যে ইজিপ্টাই মশা ডেঙ্গু ছড়ানোর মূল কারণ। ঢাকার ৯৯ শতাংশ এডিস মশা ইজিপ্টাই। আর অ্যালবোপিকটাস এডিস মশা ঝোপঝাড়ে থাকে। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী একটি ইজিপ্টাই মশা ১০০ জনকে কামড়ালে ১০০ জনেরই ডেঙ্গু হবে।

আর ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী একটি অ্যালবোপিকটাস এডিস মশা ১০০ জনকে কামড়ালে ১০ জনের ডেঙ্গু হতে পারে। একটি এডিস মশা এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এ সময় পর্যন্ত যাকে কামড়াবে তার রোগ হবে। একটি এডিস মশা চার-পাঁচজনকে কামড়ে প্রয়োজনীয় রক্ত নেয়।

এখন ডেঙ্গু ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে গেছে। একটি ছোট জরিপ করে দেখেছি, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকে বলেছেন, আক্রান্ত হওয়ার ১৫ দিন আগে তাঁরা ঢাকায় ছিলেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যদি মশা নিয়ন্ত্রণে যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নিত, তাহলে ডেঙ্গু এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করত না।

ঢাকার বাইরেও ছড়াত না। এবারের ডেঙ্গুর এ পরিস্থিতির জন্য ঢাকার দুই সিটিই দায়ী। তারা আগের মতো এবারও মশা নিয়ন্ত্রণে ভুল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে লার্ভা নিধনের দরকার ছিল। এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক বা পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে হয়। অথচ এখনো সিটি করপোরেশন থেকে লার্ভা নিধন করা হচ্ছে। মশা নিয়ন্ত্রণ আটটি প্রক্রিয়ার একটি হচ্ছে লার্ভানিধন। এ মুহূর্তে সব কটি পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।

সিটি করপোরেশন থেকে নালা-নর্দমায় ফগিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এডিস মশা পরিষ্কার জায়গায় হয়। যেখানে বৃষ্টির পানি বা সাধারণ পানি জমে থাকে। ঢাকার নির্মাণাধীন ভবনের কারণে বিভিন্ন পাত্রে পানি জমে থাকে। এ ছাড়া টায়ার, বাড়ির গ্যারেজে পড়ে থাকা বিভিন্ন পাত্রে পানি জমে থাকে। এই উৎসগুলো ধ্বংস করতে হবে। পাত্র ঢেকে রাখতে হবে। ঘাড়ে করে যে ফগার মেশিন বহন করে মশা মারা হচ্ছে, সেটা যথেষ্ট নয়। বড় পরিসরে মশা মারার জন্য ইউএলভি (আলট্রা লো ভলিউম) ফগার মেশিন লাগবে। এ মেশিন এখন বাংলাদেশে একটিও নেই।

ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু, তবু গা ছাড়া ভাব

মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা বছর ধরে জরিপ পদ্ধতি চালু রাখতে হবে। যেমন ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট এলাকা ধরে প্রতি মাসে পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে জরিপ করে দেখতে হবে—মশা বাড়ছে নাকি কমছে। কোন ধরনের পাত্রে মশা বেশি হচ্ছে, সেটা শনাক্ত করে পাত্র নষ্ট করতে হবে। মশা বিশ্রাম নেয় খুব সকালে ও সন্ধ্যায়। সেই সময় ধরে ফগিং করতে হবে।

এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা খুব কাজে দেবে না। মানুষ সচেতন হবে, সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশনগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। কলকাতার মতো একটি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ববিদদের নিযুক্ত করে নজরদারি দল গঠন করতে হবে এবং মশার জন্য গবেষণাগার তৈরি করতে হবে।

২০ বছর আগে আমি অবসর নেওয়ার সময় আইইডিসিআরে মশার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গবেষণাগার ছিল। কীটতত্ত্ববিদের অধীন সেটিকে আবার সক্রিয় করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে সব জেনেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা দুঃখজনক।
• তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ, আইইডিসিআর

https://www.prothomalo.com/bangladesh/ra9nqos6w6