২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১০:১৯

সাক্ষাৎকার

আন্দোলন চলবে, পিছপা হবো না

যুগপৎ ধারার কর্মসূচির জন্য জামায়াতের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বলেছেন, কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে না। আমরা কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছি, বিএনপিও একই দাবিতে আন্দোলন করছে। যুগপৎ হোক বা না হোক আন্দোলন চলবে। আমরা পিছপা হবো না। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর এসব কথা বলেন। নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।

মানবজমিন: দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে জামায়াতকে সেভাবে দেখা যায়নি। প্রায় একযুগ পরে চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় সমাবেশের মধ্যদিয়ে আবার সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। মাঠের কর্মসূচিতে ফিরতে এত সময় লাগলো কেন?
মুজিবুর রহমান: প্রথম কথা হচ্ছে- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কখনোই রাজনীতির মাঠ বা ময়দান থেকে দূরে ছিল না। সবসময়ই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে-ময়দানে ছিল।

পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে, যেভাবে যতটুকু কর্মসূচি দেয়ার সুযোগ পাওয়া গেছে সেভাবেই দিয়েছি। প্রতিকূল পরিবেশেও আমরা কর্মসূটি পালন করেছি।

মানবজমিন: বিগত দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১০ মিনিট ১৫ মিনিটের জন্য অল্প কয়েকজন সমর্থক নিয়ে ঝটিকা মিছিল দেখা গেছে। এতবছর পরে লোকসমাগম করে ঘোষণা দিয়ে জনসভা আয়োজনের বিষয়টি যদি পরিষ্কার করেন...

মুজিবুর রহমান: আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সানুষ প্রতিবাদ করবে, সমাবেশ করবে, কথা বলবে- এমনটাই হওয়ার কথা। সরকার আমাদের সেই অধিকারটি দীর্ঘদিন দেয়নি। আমরা মাঝে মাঝেই চাইতাম, কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দল অনুমতি পেলেও আমাদের জন্য অনুমতি মিলতো না। এবার হয়তো সরকার পরীক্ষা করার জন্য অনুমতি দিয়েছিল। অথবা, বাইরের দেশের কোনো পরামর্শ কিংবা চাপ কাজে লাগতে পারে…

মানবজমিন: আপনাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার- এটা বলতে চাইছেন?

মুজিবুর রহমান: আমাদের দেশ নিয়ে তো অনেকেই কথা বলছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমঅধিকার, শ্রমের অধিকার- এইসব নিয়ে তো আমেরিকা অনেক কথা বলছে। একপর্যায়ে তারা স্যাংশনের মতো বিষয় আরোপ করেছে। যদিও এটা আমাদের জন্য কোনো আনন্দের বিষয় নয়। এটা অপমানের ও লজ্জার। সরকার মানুষ গুম করছে, কথায় কথায় গ্রেপ্তার করছে, বিনাবিচারে কারাগারে আটকে রাখছে, জেলগেট থেকে বার বার আটক করছে। কথা বলার স্বাধীনতা পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়া যাচ্ছে না। এইসব বিষয় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ যারা কাজ করছে, যে সকল মানবাধিকার সংস্থা কাজ করছে- তারা এখন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে। অন্য কোনো দেশ আমাদের নিয়ে কথা বলবে, এটা আমরা মনে করি আমাদের জন্য লজ্জার।

মানবজমিন: সরকারের কৌশলটি কেমন?

মুজিবুর রহমান: সরকার দীর্ঘদিন আমাদের কর্মসূচির অনুমতি দিচ্ছিল না। এবার হয়তো সরকার ভেবেছে, আমরা কর্মসূচি কীভাবে সম্পন্ন করতে পারবো, সেটা দেখতে চাওয়া। আবার আমাদের লোকসমাগম দেখতে চাইতে পারে। একেবারেই শেষ সময়ে সমাবেশের আগের রাত প্রায় দশটার দিকে সমাবেশের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারপরেও স্বল্প সময়ে আমরা একটি সফল সমাবেশ করতে পেরেছি। এটাই ফার্স্ট এবং লাস্ট।

মানবজমিন: এটাই শেষ কেন বলছেন?

মুজিবুর রহমান: শেষ এই কারণে বলছি যে, এখন আর সরকার সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। কারণ তারা মনে করে যে, যদি এরপরে দেশের অন্যান্য মহানগরগুলোতে সমাবেশ করা হয়, তখন গণবিস্ফোরণ তৈরি হয়ে যেতে পারে।

মানবজমিন: আপনারা বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন...

মুজিবুর রহমান: ঘোষণা করেছিলাম এটা তো সত্যি। বিভাগীয় কর্মসূচির অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোথাও অনুমতি পাওয়া গেল না। অনুমতি ছাড়া মাঠে নামলে কী করবে তখন? আমরা তো দেখেছি- পুলিশ গুলি করবে, আটক করবে। যতরকম নির্যাতন আছে, তা করবে। গত ১৫ বছরে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৪৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুম হয়েছে ২৫ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯১,২৪৬ জনকে। এমনকি জামায়াতের মহিলা বিভাগের ১,০৮৭ জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪,৩০৯টি মামলা করেছে। এ ছাড়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ৯,৫৮৪টি মামলা দিয়েছে। আমরা বড় ধরনের কর্মসূচিগুলো দিতে পারছি না, এটা সত্যি। তাই বলে আমরা একেবারে বসে আছি এটাও নয়। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি দিচ্ছে। আমাদেরও যুগপৎ কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল। যুগপৎ ধারায় কর্মসূচির জন্য আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

মানবজমিন: এটা কি বিএনপির নেতৃত্বাধীন যে যুগপৎ ধারার আন্দোলন চলছে, সেটার সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা বলছেন?

মুজিবুর রহমান: আমরা কারও নেতৃত্বাধীন এটা মনে করি না। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি’র একটি লিয়াজোঁ কমিটি ছিল। সেখানে অন্য দলও ছিল। আলাপ-আলোচনা করে করণীয় ঠিক করতো লিয়াজোঁ কমিটি। সেই কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতো, সেভাবে কর্মসূচি পরিচালনা করা হতো।

মানবজমিন: এবার এমন আরেকটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা?

মুজিবুর রহমান: আমরা অলরেডি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। তারা যদি সম্মত থাকেন সেভাবে নির্ধারণ করা হবে। আমরা আশাবাদী এটা হয়ে যাবে।

মানবজমিন: বিএনপি’র কাছে প্রস্তাব দেয়া আছে?

মুজিবুর রহমান: জি। উই আর ওয়েটিং ফর দেম। যুগপৎ-এ থাকলে যা করার দরকার এখন আমরা সেটিই করছি। কেবল যুগপৎ ঘোষণাটি বাকি আছে। বাকি সব হচ্ছে। কেয়ারটটেকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাবো না। বিএনপিও একই দাবি করছে। অন্যরাও একই কথা বলছে। একা একা হলেও কেয়ারটেকারের দাবিতে আন্দোলন চলবে ইনশাআল্লাহ। আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে পিছপা হবো না।

মানবজমিন: আপনি নির্বাচনের কথা বললেন, সেই নির্বাচনে কীভাবে অংশ নিতে চাইছেন- এককভাবে নাকি জোটবদ্ধ?

মুজিবুর রহমান: আমরা অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবো। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত। এরপরে যদি পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে অন্য কোনো কিছু ভাবতে হয়, তখন সেটি দেখা যাবে।

মানবজমিন: বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বর্তমানে জামায়াতের শক্তি বা সামর্থ্যরে জায়গা কোনটি বলে আপনি মনে করেন?

মুজিবুর রহমান: পবিত্র কোরআনে আছে- আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তিও নেই। সামর্থ্যও নেই। আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে- মহান রাব্বুল আলামিন। তিনিই আমাদের শক্তি। তার সাহায্যেই আমরা বিজয় লাভ করবো। আমরা বিশ্বাস করি, এই জুলুমের অবসান ঘটবে।

মানবজমিন: রাজনৈতিক দলের একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জনসম্পৃক্ত হওয়া। সাংগঠনিক দিক থেকে জামায়াত এখন কতোটা জনসাধারণের কাছাকাছি আছে বলে মনে করেন?

মুজিবুর রহমান: আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আগামীতে আরও জনসম্পৃক্ত হতে পারবো এই আশা রাখতে চাই। আমরা সারা দেশেই জনসংযোগ করছি। যদি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা বিজয় অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

মানবজমিন: জামায়াতের সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা হয়েছে- এমন আলোচনা রয়েছে...

মুজিবুর রহমান: এটা সম্পূর্ণ অসত্য। যে সরকার আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছে সেই সরকারের সাথে সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না।

https://mzamin.com/news.php?news=75662