২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৬:০৭

নেপালে প্যাগোডা নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ

দেশে ভয়াবহ ডলার সংকট বিদ্যমান। ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় আমদানিকারকরা চাহিদামাফিক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ডলার সংকটের কারণে আমদানি জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। অর্থনৈতিক এই সংকটের মধ্যেই ডলার খরচ করে নেপালের লুম্বিনি শহরে প্যাগোডা নির্মাণ করতে চায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে প্রচার করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ, বহুসংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রচার করার উদ্দেশ্যে প্যাগোডা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘কনস্ট্রাকশন অব বাংলাদেশ প্যাগোডা অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট কালচারাল কমপ্লেক্স অ্যাট লুম্বিনি কনজারভেটিভ এরিয়া, নেপাল’ নামক প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাত তলাবিশিষ্ট এই প্যাগোডা নির্মাণে বাংলাদেশের খরচ হবে ৬৫ কোটি টাকা (৬.৩৭৫ মিলিয়ন)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবশ্য প্রকল্পটির আওতায় কম্পিউটার কেনা, পরামর্শক সেবা খাতসহ কয়েকটি খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের পটভূমিতে বলা হয়েছে, গৌতম বুদ্ধ লুম্বিনির বিখ্যাত উদ্যানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্থানটি লুম্বিনি উন্নয়ন ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত যা, প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ আইন ১৯৫৬ দ্বারা সুরক্ষিত। ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নেপাল সরকার লুম্বিনি এলাকাটির যথাযথ সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য লুম্বিনি উন্নয়ন ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেছেন। লুম্বিনি সংরক্ষণ এলাকায় নিজস্ব খরচে সেখানে বৌদ্ধ প্যাগোডা/মঠ ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আছে বিশ্বের এমন দেশকে বিনামূল্যে জমি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট, একটি বাংলাদেশ প্যাগোডা ও বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স সংরক্ষিত এলাকায় স্থাপনের জন্য কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রায় ৬ একর জমির একটি প্লট প্রদান করে। প্যাগোডা নির্মিত হলে বাংলাদেশের বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের ব্যবহারের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ, সংস্কৃতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাত তলাবিশিষ্ট মন্দিরের মূল ভবন নির্মাণ, তিন তলাবিশিষ্ট সার্ভিস ভবন ও কমন এরিয়া নির্মাণ, গার্ডরুম এবং চেঞ্জ রুম নির্মাণ, বহিঃবিদ্যুতায়ন ও পানি সরবরাহ ও অফিস সরঞ্জাম, আসবাবপত্র এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি ক্রয়।
এদিকে প্রকল্পটির পরামর্শক সেবা খাতে ২ কোটি টাকা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া তারা দায়িত্ব ভাতা এবং প্রেষণ ভাতা খাত দুইটি প্রয়োজন নেই বিধায় তা বাদ দিতে বলেছে। এবং যানবাহন ভাড়া খাতে ৩০ লাখ, টেস্টিং ফি খাতে ৩০ লাখ, সম্মানী খাতে ১৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা ও প্রকল্পের আওতায় ১৩টি কম্পিউটার কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

https://mzamin.com/news.php?news=75501