২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৫:৪৪

ডেঙ্গুতে ২২ দিনে ৩০০ জনের মৃত্যু

গতকাল আক্রান্ত ২৮৬৫ মৃত্যু ১৪

এ মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেল ৩০০ জন। এই সংখ্যা পূর্বের যেকোনো এক বছরের মৃত্যুর চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরের আরো ৭ দিন বাকি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪০০ অথবা এর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে মৃত্যুর সংখ্যা। কারণ গত ২২ দিনে (প্রকৃতপক্ষে ২২ দিন ৮ ঘণ্টা) দেশে ডেঙ্গু রোগে প্রতিদিন গড়ে ১৩ জনের মতো মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর (২০২২ সাল) রোগটিতে দেশে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগটি শুরুর পর থেকে ২০২২ সালেই সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হয় ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এছাড়া ২০২১ সালে মারা গেছে ১০৫ জন এবং আক্রান্ত হয় ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ২০২০ এর করোনা সংক্রমণকালে ২০ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছিল। অপরদিকে ২০১৯ সালে ১৬৪ জন মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয় এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজার ১৪৮ জন। এ বছর এক মাসেই আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডটি অতিক্রম করে ফেলেছে। অন্যদিকে চলতি বছর গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত এক মাসে যত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এর আগে সারা বছরেও এত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ছুটির দিনে ডেঙ্গুতে নতুন করে মারা গেছে ১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৬৫ জন। ডেঙ্গু রোগে গতকাল যে ১৪ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ৮ জন এবং ঢাকায় মারা গেছে ছয়জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকায় ছিল ৮১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৫১ জন আক্রান্ত হয়েছে।

ডেঙ্গু জীবাণুুবাহী এডিস মশা উৎপাদন স্থান যেমন ঘরে বাইরের বিভিন্ন পানির উৎসে। আবার এরা ঘরের মধ্যেও জন্ম নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরের মধ্যে কোনো স্থানে একনাগাড়ে ৩-৪ দিন এক ফোটা পানিও জমে থাকে সেখানে এডিস মশা শতাধিক ডিম পেড়ে দিতে পারে। তা ছাড়া শহরাঞ্চলের বাসায় এমন অনেক স্থান থাকে যেখানে দিনের পর দিন পরিস্কার পানি জমে থাকে। পানি সে উৎসগুলোও মশার উৎপাদন কারখানা হয়ে যেতে পারে। ঘরের এডিস মশা ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করে ঘরের মানুষকেই কামড়াতে পারে বলে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন। সে কারণে ঘরের ভেতর কোথাও বেশি দিন পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তারা। তারা বলছেন, শুধু ঘরে বা বাসায় নয়, বাসার পাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সবাই খেয়াল করলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমে যাবে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, স্ত্রী এডিস মশার ডিম পরিস্ফূটনের জন্য মানুষের রক্তের দরকার হয়। পুরুষ মশা কামড়ায় না, এরা গাছের রস খেয়ে বেঁচে থাকে। স্ত্রী এডিস মশা ঘরেই বাস করে, সে কারণে ঘরের সর্বত্র প্রতিদিনই পরিস্কার করে ফেললে শুধু এডিস মশা নয়, সব ধরনের মশাই তাড়িয়ে দেয়া যায়। আবার কারো সামর্থ্য থাকলে প্রতিদিন একবার করে হলেও কীটনাশক স্প্রে করে নিজেদের ডেঙ্গু থেকে মুক্ত রাখতে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেপ্টেম্বরের ২২ দিন ৮ ঘণ্টায় দেশে মোট ৬০ হাজার ৯০৯ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া আগস্ট মাসের ৩১ দিনে দেশে মোট ৭১ হাজার ৯৭৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে কখনো এই দুই মাসে এত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। উল্লেখ্য, চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট এক লাখ ৮৪ হাজার ৭১৭ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮৯৩ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/779504