২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৪:২৩

মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণায় সর্বত্র আতঙ্ক

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ঘোষণায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনার, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিচারপতি, আমলাসহ সর্বত্র। বিশেষ করে সরকারের অনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সাথে যারা জড়িত ছিল, সে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু নামও ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো যাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ হবে, সেই তালিকা জানা যায়নি। কেউ বলছেন, এই তালিকা প্রায় অর্ধ হাজার, আবার কেউ বলছেন, শতাধিক, আবার কেউ বলছেন এটি ৫০টিরও কম। রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, সরকারের উদাসীনতার কারণেই বাংলাদেশের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে না নিত তাহলে এটি হতো না।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ‘বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই প্রতিধ্বনি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজনে সব প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এবং একই সঙ্গে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও অধিকারচর্চাকে সহিংসভাবে দমনের যেকোনো নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি। বিএনপি মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মির্জা ফখরুল জানান, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের দায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। আর এটি বাংলাদেশের জন্য অসম্মানের বলে মনে করছেন তিনি। সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও বিচারকম-লী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি দলের লোকজনের বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি বাংলাদেশে জন্য সম্মানজনক নয়। কারণ এ ধরনের সমস্যায় বাংলাদেশে পড়ার কথা ছিল না। কেননা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, যুদ্ধ করে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের অধিকার হরণ, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন সব কিছু তারা চালিয়ে গিয়েছে। ফলে আজ এ অবস্থার (ভিসা বিধিনিষেধ) সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, গত দুইটি নির্বাচনে (২০১৪ এবং ২০১৮ সালে) তারা একই কাজ করেছে। এ জন্য বর্তমান সরকারের ওপর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো রকমের আস্থা রাখা যায় না। সে কারণে আজ বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি আরোপ হয়েছে।

ভিসা বিধিনিষেধে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদেরও নাম এসেছে। এ বিষয়ে বিএনপির মনোভাব কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুলের বলেন, এটা কীভাবে তারা মিন করেছে তা আমি জানি না। কারণ ১৫-১৬ বছর ধরে বিরোধী দল তো সরকারের হাতে মার খেয়ে গেছে। আর তো কিছুই হয়নি। বিরোধী দলের তো এখানে অন্য কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই, প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশে অফিসিয়ালি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, তাহলে কি এখানে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি ভিসা নীতির আওতায় আসছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। তারা বিরোধীদল বলতে কাকে বুঝিয়েছে আমি সেটাও জানি না। কারণ নামগুলো তো তারা প্রকাশ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এখানে বলাটাও মুশকিল আছে। বিধিনিষেধ আরোপ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা নিশ্চয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কারণ যারা অন্যায়-অত্যাচার করছে, বিশেষ করে আমেরিকাতে যাদের সম্পদ ও পরিবার আছে, ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের ওপর তো তার (ভিসা বিধিনিষেধের) একটা প্রভাব পড়বে।

সূত্র মতে, আতঙ্কের শুরু হয় বাংলাদেশীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর পরই। তবে ওই ঘোষণার প্রতিফলন মূলত সীমাবদ্ধ ছিল সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পরিম-লে। কিন্তু গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এক বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সম্পদ জব্দের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং রাজনৈতিক দলের সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বিধিনিষেধ প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণœ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। গৃহিত পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি অংশ বলে এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীদের একজন সাইফুল ইসলাম (প্রকৃত নাম নয়)। দেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে শীর্ষস্থানীয় গ্রুপগুলোর একটির স্বত্বাধিকারী তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোয় বছরে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেন তিনি। ব্যাংক, আবাসনসহ অন্যান্য খাতেও রয়েছে তার বড় বিনিয়োগ। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একাধিক বাড়িসহ জমা করেছেন বিপুল সম্পদ। তবে মার্কিন বিধিনিষেধের আওতায় পড়ার আশঙ্কায় বেশ উদ্বিগ্ন এ ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছেন, মার্কিন ভিসানীতি কিংবা বিধিনিষেধের আওতাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে তারও নাম রয়েছে কিনা? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী বলেন, মার্কিন সরকার বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে আমাকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আতঙ্কজনক সংবাদও দিচ্ছেন। বুঝতে পারছি না শেষ পর্যন্ত কী হয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাশিয়া কিংবা ইরানের ব্যবসায়ীরা হয়তো চলতে পারছেন কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কর্মকা- চালানো সম্ভব নয়। কেননা আমাদের রফতানি পণ্যের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।
জানা গেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র। দেশের রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি নির্বাচনকে ঘিরে প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসছে এমন গুঞ্জনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্যে রফতানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্রম ইস্যুতেও নতুন ধরনের মার্কিন বিধিনিষেধ আরোপের আতঙ্ক রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকার চায় বর্তমান কাঠামোর (নিজেদের অধীনে) মাধ্যমেই নির্বাচন পরিচালনা করতে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে এলো মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাপত্র। যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘোষণায় দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগ দেশের জন্য সুখবর নয় বললেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটিকে আরো নেতিবাচক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় না গেলে কিছু হবে না। এর আগে বলেছিলেন, যারা স্যাংশন দেয় তাদের কাছ থেকে কিছু নেব না। দেশের রাজনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি দল দিশেহারা হয়ে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। সবশেষে জাতিসংঘের অধিবেশনে আমেরিকায় অবস্থান করা অবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রী নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে এই দেশের জনগণ ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে। তিনি বলেন, কে নিষেধাজ্ঞা দিল আর কে দিল না, তাতে কিছু যায় আসে না। আমার ছেলেও এখানে আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার সম্পত্তি আছে, বাড়িঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের বাংলাদেশ তো আছেই। তিনি বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। ভিসানীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই। কারও শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় এসেছি এবং আছি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণা আ’লীগের জন্য খুবই লজ্জাজনক মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি কার্যকর করবে। আমরা বলতে চাই, যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র বা জনগণের ভোটাধিকারে বাধা দিচ্ছে তারাই বর্তমান সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের ঘোষিত অঙ্গীকার রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে পরপর দুবার বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, সেটিও স্মরণ করা যায়। বাংলাদেশে উল্লেখ করার মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল থাকলে ঘটনা নিশ্চয়ই ভিন্নধারায় বইত। এ ধরনের পৃথক ভিসানীতি অন্তত গৃহীত হতো না। এর আগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের ক’জন কর্মকর্তার ওপর সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ঘন ঘন বাংলাদেশ সফরে এসেছেন এবং ওখান থেকেও তারা এদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ওপর বারবার জোর দিয়েছেন। নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ঘোষণা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে তাদের সিরিয়াসনেসই প্রকাশ করলো।

নির্বাচন বিশ্লেষক হাসান মামুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর সরকারের সতর্কতা আরও বাড়ানো উচিত। সরকার পক্ষকে দলীয় আর প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা বাদ দেয়া উচিৎ ছিল। সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন করে তাকে রাজনীতিতে প্রান্তিক বানিয়ে রাখার চেষ্টা বাদ দিতে হতো। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ, যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এসব নিষেধাজ্ঞার অনুসরণে নিজেরাও ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

অনারেবল সোসাইটি অব লিঙ্কন’স ইনের সদস্য, আন্তর্জাতিক আইন গবেষক ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, শুরুতে সরকার গুরুত্ব না দিলেও ইরাকের অর্থনীতি এক প্রকার ধসে পড়ে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে খনিজসম্পদে ভরপুর দেশটিও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ জাহাজ স্পার্টা-৩ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ২০ ডিসেম্বরই ওই জাহাজটির বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তা মোংলা বন্দরে ভিড়তে পারেনি। ভারতের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের চেষ্টা করেও জাহাজটিকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত জাহাজটি রাশিয়ার উদ্দেশে ফিরে যায়। কারও বিরুদ্ধে বা কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা থাকলে এর প্রভাব ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রেও পড়বে। আমদানি-রপ্তানি ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও তার সদস্যদের প্রশিক্ষণেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, সরকারের দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক অপশাসন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের মর্যাদাকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে, সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকার গঠন করাই হবে বিদ্যমান বহুমুখী সংকটের আপৎকালীন সমাধান।

https://www.dailysangram.info/post/536248