২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:৫৩

মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছেন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা

ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ। পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থন করতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় আরও বলা হয়, যাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে; তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। তার বাইরেও কেউ যদি নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তবে তাকেও ভিসা দেওয়া হবে না। এতে আরও বলা হয়, আমাদের আজকের এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করা। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী যারা গণতন্ত্রকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তাদের জন্যও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতির প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয়েছে; তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি দলের নেতা এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা রয়েছেন।

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। এটা তাদের আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে পুনরাবৃত্তি করেছে। এখানে তারা সব দলের ওপর প্রয়োগ করবে বলে উল্লেখ করেছে। এটা নিয়ে আমার খুব বেশি কিছু মন্তব্য নেই। জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগেই বলেছিল যে, তারা ভিসানীতি প্রয়োগ করবে। এখন সেটা প্রয়োগ করেছে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কারা বাধার সৃষ্টি করছে সেটা তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন। এই মূল্যায়ন বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। সাধারণত তথ্য-উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করেই তারা এটা করে থাকে।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটা হলো একটা সতর্কবাণী, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সবাই ইতিবাচকভাবে কাজ করি। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক হলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা নিয়ে আমাদের এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের দেশে কাকে ভিসা দেবে নাকি দেবে না এটা তাদের ব্যাপার। আমাদের এত কথা বলারও কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন কিন্তু আমাদের দেশে এতগুলো রোহিঙ্গা পাঠানোর কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না। এটা কিন্তু চিন্তার বিষয়।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ যুগান্তরকে বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগকে ইতিবাচকভাবে দেখি। দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তারপর এখন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের এই সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই।

প্রসঙ্গত, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়তার লক্ষ্যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। তখন তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে-এমন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অর্থ হলো-ভোট কারচুপি, ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধাদান, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়াকে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া। এসব কর্মকাণ্ডের জন্যও ভিসানীতির প্রয়োগ হতে পারে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/721013