২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:২৯

বৃষ্টির একদিন পরও সরেনি পানি রাজধানীবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগ

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টির পর রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-গলিতে জমে থাকা পানি সরেনি শুক্রবার বিকেলেও। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিম পানিবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করলেও শুক্রবার সন্ধ্যায়ও রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় মূল সড়কে হাঁটু সমান বা তার চেয়েও বেশি পানি দেখা গেছে। এছাড়া পুরান ঢাকাসহ নি¤œ এলাকাগুলোতে অলিগলি এবং ঘরের ভেতরেও পানি আটকে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভোগান্তি কাটেনি নগরবাসীর।
বৃষ্টিতে রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিন ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার রাতেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। সমস্যা হলো শুক্রবার সন্ধ্যায়ও রাজধানীর নিউ মার্কেট, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আনন্দবাজার, গুলিস্তান এবং গ্রিন রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও রয়েছে হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর পরিমাণ পানি। কয়েকটি জায়গায় সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিমকে কাজ করতে দেখা গেলেও জনবল ছিল খুবই কম। টানা বৃষ্টির পর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। অনেক রাস্তা তলিয়ে গিয়ে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংলগ্ন রাস্তায় দেখা যায় মাঝে মাঝে যেন স্রোত বইছে। এতে হলবন্দী হয়ে পড়ে হাজারো শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ আশপাশের হলগুলোতে প্রবেশ করে বৃষ্টির পানি। শিক্ষার্থীরা আটকা পড়ে যায় হলে।

রাজধানীর আজিমপুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন গলি, দোকানপাট এবং বাসাবাড়ির নিচতলাতেও বাসিন্দারা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। তবে আশপাশের ড্রেনগুলোতে পানি জমে যাওয়াতে পানি সরানোর চেষ্টা করেও কোনও লাভ হচ্ছে না।

আজিমপুরের দিক থেকে আসা সিএনজি চালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে আজিমপুরে একটা ট্রিপ নিয়ে এলাম একটু আগে। এসে দেখি ওই দিকের রাস্তায় এখনও পানি জমে আছে। সিএনজি নিয়ে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যাত্রী এখানে নামিয়ে দিয়ে রিকশা ঠিক করে দিয়েছি।

বংশাল এলাকারা বাসিন্দা রাহিদুল ইসলাম নিজের ব্যক্তিগত কাজে কাকরাইল গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বংশালের প্রধান সড়কসহ অলিগলি এখনও পানিতে ডুবে আছে। অলিগলির ময়লা-আবর্জনা পানির সঙ্গে মিশে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বংশাল পার হওয়ার সময় প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটু পানি মাড়িয়ে আসতে হয়েছে।

লালবাগের বাসিন্দা সাখাওয়াত আলী জানান, মধ্যরাতে তাদের গলি ভেসে বাসায় পানি আসতে শুরু করে। বিভিন্নভাবে পানি আটকানোর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি থামার পর পানি অপসারণের জন্য ছোট বালতির মাধ্যমে অনেকক্ষণ চেষ্টা করে মোটামুটি ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা করা গেছে।

একই এলাকার মুদি দোকানি শাহ আলম খোকন বলেন, রাতের বৃষ্টিতে দোকানে পানি ঢুকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মুদি মালামাল ভিজে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও পানি সরাতে না পেরে অনেক মালামাল ফেলে দিতে হয়েছে।

নিউমার্কেট মার্কেটের ভেতর-বাইরে কোমর সমান পানি। মিরপুর সড়কে এবং ঝিগাতলা থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অংশে দুপুর পর্যন্তও পানি নামেনি। প্রায় প্রতিটি দোকানেই বৃষ্টির পানি। নিচু দোকানগুলো প্রায় অর্ধেক অংশ পানির নিচে।

অনেক দোকানি ও দোকান কর্মচারীকে তাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেলেও পানির কাছে অসহায়। অনেক ক্রেতাকেও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে না পেরে ফিরে যেতে দেখা যায়। নিউ মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হলের আবাসিক ছাত্র মো. ফেরদৌস বলেন, ‘শরণার্থীর মতো আছি। হলের নিচতলায় পানি বেশি ছিল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাত থেকেই তাদের কুইক রেসপন্স টিম মাঠে কাজ করছেন। এছাড়া শুক্রবার সাধারণ ছুটি হলেও তারা তাদের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ বিভাগ কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নাম্বারে নগরবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সমস্যার সমাধানে দুই সিটি করপোরেশনই নগরবাসীর সাহায্য চেয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুরে রাস্তায় জমে থাকা পানি বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিলো। সেই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পানির সংস্পর্শে এসে ৩ পথচারী এবং একজন শিশু মারাত্মক আহত হন। তাদের উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তিরা হলেন মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫) ও মেয়ে লিমা (৭)। এই দম্পতির সাত মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানায়, এই পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোহাম্মদ অনিক (২০) নামের আরেক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা।

https://www.dailysangram.info/post/536206