২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৩:১৫

নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের বাজার মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা

কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের বাজার। একের পর এক অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছে না। সরকারের নির্দেশনা কেউ মানছে না। খুচরা পর্যায় থেকে পাইকারি কোথাও সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে আলু বা পেঁয়াজ বিক্রি করছে না কেউ। উল্টো গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ যেখানে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা কেজিতে, সেখানে গতকাল শুক্রবার মানভেদে একই পেঁয়াজ কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে। আর আলু বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই প্রতি কেজি ৫০ টাকায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে গত এক সপ্তাহ আগে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু বাজারে এ নির্দেশনা কেউ মানেনি। সরকারের নির্ধারিত দামে আলু কোথাও ৩৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়নি, ৬৫ টাকায় পেঁয়াজও বিক্রি করছে না কেউ আর ডিমের দাম ৫০ টাকা হালি। অন্যদিকে সবজির দামও আকাশচুম্বী।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ মুদি দোকানে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৯০ টাকায় । আর ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এদিকে ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর আরও ছয় কোটি পিস ডিম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে এসব ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা লিটার, খোলা তেল ১৬০ টাকা, পাম ওয়েল ১৪০টাকা, চিনি খোলা ১৩০ ও প্যাকেট ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বাজারে দেখা গেছে, বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি না। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তুলনামূলক কম দাম বলতে শুধু মাত্র পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আর বরবটি, টমেটো তো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া সেঞ্চুরি ক্রস করে ১২০-এ গাজর, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সব মিলিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে সব সবজির দামও বলতে গেলে আকাশ ছোঁয়া। বাজারে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি (৪ টি) ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর আগের আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সকল প্রকার মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন আগে ৩২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া রুই মাছ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়ে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা কেজিদরে। বড় সাইজের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত, তবে ছোট সাইজের কিছু ৮০০ টাকা কেজিদরে পাওয়া যাচ্ছে। কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বাটা মাছ।

গত সপ্তাহেও এ মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বড় সাইজের ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা দরে। তবে মানভেদে এ মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া ছোট পুঁটিমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে মলা মাছ। তবে ভালো মানের কোনো ছোট মাছই ৫০০ টাকা কেজিদরের নিচে মিলছে না।

এদিকে, বাজারে ব্রয়লার কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে অবশ্য ১৭০ টাকা কেজিদরে ব্রয়লার পাওয়া গেছে। অপদিকে, রোস্টের মুরগি কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গরুর গোশত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, খাসির গোশত ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মাছ বিক্রেতারা জানান, মাছের দাম তো একরকম থাকে না। দাম বাড়ে কমে। আমরা আড়ত থেকে যে দামে কিনি, তার থেকে অল্প কিছু লাভে বিক্রি করি। এখানে আমাদের তো কিছুই করার নেই।

https://www.dailysangram.info/post/536186