২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ২:৫৩

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় দেশ

ড. মো: মিজানুর রহমান

বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশের বেশি কৃষি খাতে। স্বাধীনতার পর সাড়ে সাত কোটি জনগণের খাদ্য জোগানে ঘাটতি ছিল ২৫-৩০ লাখ টন। অথচ গত ক’বছরে ১৮ কোটি জনগণের খাদ্য জোগানে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ দেশের গবেষক, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকদের যৌথ প্রচেষ্টায় ফসলের উৎপাদনশীলতা বেড়েই চলছিল। ফলে চাষের জমি প্রতি বছর এক শতাংশ হারে কমার পরও মোট উৎপাদন বাড়ছিল, আমদানি কমছিল এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছিল।

কৃষির এই অগ্রগতির ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, দেশের দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এফএওর বার্ষিক খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রতিবেদন-২০২১ অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে দেশের প্রধান শস্য উৎপাদন চার থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৯৪তম দেশ। অথচ প্রাথমিক কৃষিপণ্য উৎপাদনে এ দেশের অবস্থান এখন ১৪তম (এফএও-২০২৩)। এফএওর ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য ছিল তিন হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় চার লাখ কোটি টাকার সমান। উৎপাদনের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টন। এক কথায়, বিগত ১০ বছরে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে, উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু জনসংখ্যা তো বাড়ছে প্রতি বছর ২০ লাখ করে, আবাদি জমিও কমছে ০৮ লাখ হেক্টর করে। উচ্চমাত্রার দারিদ্র্য, ব্যাপক হারে বৈষম্য বৃদ্ধি ও অনমনীয় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাও এখন বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাবনার বিষয় হয়ে উঠছে।

আশঙ্কার বিষয় হলো, এফএও এবং ডব্লিউএফপি ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই সতর্ক করে বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের ৪৫টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা বিশ্বের অন্তত ২৭৬ মিলিয়ন মানুষকে মারাত্মক খাদ্যসঙ্কটে ফেলবে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ কৃষিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতির হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। এত সফলতার পরও আশঙ্কার বিষয় হলো, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সর্বসাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ এখন যথাযথ পরিমাণ খাদ্য খেতে পারছে না। ৮৮ শতাংশ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে এসেছে খাদ্যমূল্যের ক্রম-ঊর্ধ্বগতি। দেশের সরকারের উচ্চমহল থেকেও দেশের মানুষকে ২০২৩ সালে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছিল; এমনকি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছেন তারা। সুতরাং দেশের খাদ্যনিরাপত্তার আশঙ্কা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার ভবিষ্যৎ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) মতে, সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমে যায় ফলে গত বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কমেছে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তাকে ইতোমধ্যে হুমকিতে ফেলেছে। ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ সারের বাজার ও প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড হারে বেড়েছে। পাশাপাশি দেশের মূল শস্য বোরোধান সেচ ও রাসায়নিক সারনির্ভর হওয়ায় ডিজেল-পেট্রোলচালিত সেচযন্ত্র এবং রাসায়নিক সারের মূল্য ও সরবরাহব্যবস্থা দেশের কৃষি উৎপাদনের ওপর ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলেছে। ফলে সামনে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো সঙ্কটজনক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ-ইউএসডিএ। ইউএসডিএর মতে, আগামী আমন এবং আউশ উভয় মৌসুমেই, যা সামগ্রিক ধান উৎপাদনে যৌথভাবে ৪৫ শতাংশ অবদান রাখে, ধানের উৎপাদন হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলদেশের বর্তমান চাল উৎপাদনের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারিভাবে বৈশ্বিক উৎস থেকে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বেসরকারি খাতেও আরো ১০ থেকে ১৫ লাখ টন আনতে আমদানি করতে হতে পারে।

এই পূর্বাভাসটি এমন সময় এসেছে যখন ভারত সাদা-চাল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি চাল রফতানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে। শোনা যাচ্ছে মিয়ানমারও চাল রফতানি বন্ধের কথা ভাবছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) অল রাইস ইনডেক্স অনুসারে চালের দাম ইতোমধ্যেই ১২ বছরের সর্বোচ্চ হয়েছে যা গত জুলাই মাসে ১২৯ পয়েন্টে পৌঁছেছিল। সাথে ইউক্রেন এবং রাশিয়া দেড় বছর ধরে যুদ্ধে জড়িত। এই দুই দেশই কৃষিপণ্যের নিট রফতানিকারক এবং খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজারে সরবরাহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেখানে রফতানিযোগ্য সরবরাহ প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইউএসডিএর ২৩ আগস্ট ২০২৩ সালে প্রকাশিত রিপোর্টের মতে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে স্বল্প বৃষ্টিপাত ২০২৪ সালের আমন ও আউশের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। ইউএসডিএর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আমনের বীজতলা তৈরির পরিমাণ জমির দিক থেকে ০৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আউশ ধানের উৎপাদন ২০২৪ অর্থবছরে ২৪ লাখ টনে নেমে আসতে পারে যা ২০২৩ সালের একই মৌসুমে ছিল ২৭ লাখ টন। আমন ও আউশ মৌসুমে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। কেবল আমন মৌসুমে এই সম্পূরক সেচের জন্য একর প্রতি দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়।

চলতি বছরের ২৬ জুলাই ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত কম বৃষ্টিপাত আমন ও আউশ চাষিদের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। ইউএসডিএর আউশ ও আমন উৎপাদনের পূর্বাভাসটি তার পরই আসে যাতে তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশে ৬৬ শতাংশ, মে মাসে ৪৪ শতাংশ, জুনে ১৬ শতাংশ এবং জুলাই মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এপ্রিল-মে মাসে খরার কারণে আউশ চাষাবাদ ১৩ দশমিক ৯ লাখ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৫ লাখ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছিল। ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ বছর ৩ দশমিক শূন্য ৪ লাখ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ দশমিক ৮ লাখ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ‘বাংলাদেশ এল নিনোর পর্যায়ে প্রবেশ করছে’। উল্লেখ্য, এল নিনো একটি বৈশ্বিক জলবায়ু ঘটনা যা নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের জলকে উষ্ণ করে। এটি বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার এবং পার্শ্ববর্তী জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এর বিপরীত হলো ‘লা নিনা’ যা বৃষ্টি ও বন্যা নিয়ে আসে। ‘এল নিনো’ মূলত একটি উষ্ণ সামুদ্রিক ্রােত। গ্রীষ্মপ্রধান পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যখন সাধারণ গড় তাপমাত্রা থেকে শূন্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় সেই অবস্থাকেই বলা হয় ‘এল নিনো’। সে মাফিক শুষ্ক আবহাওয়া আরো কয়েক বছর অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বাংলাদেশে তাপপ্রবাহের তীব্রতা এবং সময়কাল বাড়তে পারে। এ ধরনের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াই বাংলাদেশের এখন অন্যতম বিকল্প।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান খাদ্যসরবরাহ পরিস্থিতি কৌশলগতভাবে ভালো হলেও দেশটি সমস্যায় পড়বে, যদি আগামীতে আমদানি করতে হয়। ইউরোপে চলমান যুদ্ধের মধ্যে একটি অস্থির বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল এবং গম সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে খাদ্যশস্য আমদানিতে কোটা কার্যকর করতে দেশটির নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। খাদ্যশস্যের সুষ্ঠু আমদানি নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের জন্য আমদানি শুল্কের প্রতিবন্ধকতা দূর করা উচিত।

তবে নানা অপ্রাপ্তি, অসঙ্গতি এবং আশঙ্কা সত্ত্বেও বলতে হয়, প্রথাগতভাবে যাকে আমরা দুর্ভিক্ষ বলে জানি, বাংলাদেশে তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ পরিবার সীমিত সামর্থ্যরে কারণে চরম খাদ্যসঙ্কটে পড়ে স্বল্প সময়ে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যুমুখে পতিত হলে সেখানে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে ধরে নেয়া হয়। যেমন ১০ লাখ মানুষের দক্ষিণ সুদানকে জাতিসঙ্ঘ সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষকবলিত বলে ঘোষণা করেছে মূলত সেখানকার গৃহযুদ্ধ, দীর্ঘকালীন তীব্র খরা ও উচ্চমূল্যের কারণে মানুষের খাদ্যসঙ্কটে মৃত্যুর হার দেখে। তারপরও বাংলাদেশের নানা পরিসংখ্যানে দুর্ভিক্ষ না হলেও বড় ধরনের খাদ্যসঙ্কটের আভাস স্পষ্ট। তাই আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে, কারণ দেশের এক হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ খাদ্যের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, ৬৪ শতাংশ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমিয়েছে, ঋণ নিচ্ছে ৬০ শতাংশ মানুষ, আর ৪৭ শতাংশ মানুষ মাছ-মাংস এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ দুই বেলা এমনকি এক বেলা খেতেও বাধ্য হচ্ছে। ১০ শতাংশ মানুষ শিশুখাদ্য কেনাও বন্ধ করেছে। সর্বোপরি দেশে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজন বিবেচনায় ২০৩০ সালে চালের মোট চাহিদা হবে ৩ দশমিক ৯১ কোটি টন এবং ২০৫০ সালে ৪ দশমিক ২৬ কোটি টন। দেশের নীতিনির্ধারকরা নাগরিকদের ওপর চেপে বসা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ঘাটতি নিয়ে ভবিষ্যতের ওই চাহিদা ও উৎপাদন কিভাবে নিশ্চিত করেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও দেশের আগামী কয়েক প্রজন্মের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টির আশঙ্কা জাতির জন্য ভীষণ বেদনাদায়ক। তবে খাদ্যের অধিকার যেহেতু একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত, তাই রাষ্ট্রকে অবশ্যই এ খাতে আর্থিক, বস্তুগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
Mizan12bd@yahoo.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/779160