২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:৩৫

রাজধানীতে ৬ ঘণ্টায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সড়কে মধ্যরাতেও যানজট

রাজধানীতে টানা ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবারও রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আজ বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি, সড়কে মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল যানজট। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি গত ৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড। আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, এটি অতিভারী মাত্রার বৃষ্টি। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি চলছিল।

মূলত রাত ৯টার পর চলা টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়ে রাজধানীজুড়ে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃহস্পতিবার ঢাকায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে বলা হলেও হয়েছে এর উল্টো।

ভারী বৃষ্টিতে ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, মিরপুর, বনানী, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। গ্রিন রোডে কোমরপানিতে রিকশা ও মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা সমকালকে জলাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কোথাও কোথাও জমে যায় হাঁটুপানি। ফলে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সবজি পানিতে ভাসতে দেখা যায়। পার্শ্ববর্তী তেজতুরী বাজারের বিভিন্ন গলিতেও জমে যায় হাঁটু পরিমাণ পানি। তলিয়ে যায় দোকানপাট।

মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাজুড়ে ঘরেফেরা মানুষের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা থেকে শুরু করে সংলগ্ন এলাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

রাত দেড়টায় মিরপুরের কালশী এলাকায় শতাধিক গাড়ি পানিতে নষ্ট হয়ে রাস্তায় আটকে থাকতে দেখা গেছে। ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কেও পানি উঠে যায়। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকা সাধারণত উঁচু। এখানে ভারী বৃষ্টিতেও এত দিন জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি। সড়কে চলাচলের পথ না রেখে উঁচু বিভাজক তৈরির কারণে পানি সরতে পারছে না বলে জানান তারা।

রাত ২টার দিকে বিজয় সরণি, সংসদ ভবনের সামনে, আসাদ গেইট, মোহাম্মদপুরেও দেখা যায় তীব্র যানজট। অনেক স্থানে এখনও রয়েছে হাঁটু পানি। যানজটে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীরা।

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশপাশ এলাকায় সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপের কারণে শুক্রবার পর্যন্ত মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। অথচ রাতভর ভারী বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্বাভাসের সমালোচনা করেছেন অনেকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ঢাকায় ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হচ্ছে ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে। সেদিন দিনের প্রথম ভাগের মধ্যে ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর ২০০৯ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ৩৩৩ মিলিমিটার। এর পর বেশ কয়েকবার ২০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২ সালে ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৯ মিলিমিটার। তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তার পর বাকি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টি গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামান্য বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস বিষয়ে তিনি বলেন, সব এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়নি। আমরা ঢাকাসহ সারাদেশের জন্য পূর্বাভাস দিয়েছিলাম।

পুরান ঢাকার বংশাল ও বাংলাবাজার, জুরাইন, যাত্রাবাড়ীর কাজলা, গুলশানের শুটিং ক্লাব মোড়, তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, কাকরাইল, বিমানবন্দর সড়কে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পানি জমে থাকার খবর পাওয়া গেছে। ওইসব এলাকা ও রাস্তায় যান চলাচলের গতি কমে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।

রাত ১১টা ২৬ মিনিটে সমকালের প্রতিবেদক মোটরসাইকেলে ধানমন্ডির উদ্দেশে রওনা হন। তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার রেলগেট পর্যন্ত যেতেই তাঁর সময় লাগে ৪৯ মিনিট। হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে কোমরপানি দেখা গেছে। পানি উঠেছে রেললাইনেও। ফলে দুটি ট্রেন থেমে ছিল ১০ মিনিট।

রোকেয়া সরণিতে কয়েকশ গাড়ি আটকা পড়ে। এর আধাঘণ্টা আগেই তলিয়ে যায় গ্রিন রোড এলাকা। সড়কে বহু গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়। নীলক্ষেত, কাঁটাবন, হাতিরপুল এলাকার সড়কেও পানি জমতে দেখা যায়।

https://samakal.com/capital/article/2309197425