২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, ১০:১৮

ঢাকার ২ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি

মৃত্যু আরো ৮, নতুন আক্রান্ত ২৮৮৯

ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকার দুই হাসপাতালে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণে। কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত সরকারি ২০ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ৪২২ জন মানুষ মারা গেছে। মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে ঢাকা শহরে। এদের মধ্যে ২৬১ জনই ঢাকার বড় দুই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছে। এই দু’টি হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সারা দেশের তুলনায় ডেঙ্গুতে এই দুই হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৩০ শতাংশ ডেঙ্গুরোগী।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। অপরদিকে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে আরো দুই হাজার ৮৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চিকিৎসার জন্য। মৃতদের মধ্যে সাতজনই ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এবং বাকি একজন মারা গেছে কেবল ঢাকায়। এ ছাড়া ১০ হাজার ২৮০ জন এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঢাকা শহরের ওই দুই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা গেছে ১৪১ জন এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ১২০ জন। তবে এই হাসপাতালের মধ্যে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি করা হয়। দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর ১৬ শতাংশ মারা গেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজে মারা গেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। চলতি বছর ঢাকা মেডিক্যালে মোট ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৭৩ জন এবং মুগদা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে মোট ১০ হাজার ৪৩৫ জন। এ ছাড়া ঢাকার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ৪১ জন মারা গেছে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে, ৩৬ জন মারা গেছে মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে, ৩১ জন মারা গেছে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, ১৭ জন মারা গেছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে, ১২ জন মারা গেছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, ১০ জন মারা গেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ঢাকার বাকি সরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৪ জন।

ঢাকায় এত বেশি ডেঙ্গুরোগী মারা যায় কেন, এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা: সাব্বির হোসেন জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয় মারাত্মকভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীগুলো। এসব রোগী ঢাকার মধ্য থেকে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। এদের মধ্যে আগে থেকেই অনেকে কিছু রোগে আক্রান্ত থাকে। আবার বেশির ভাগই রোগীই ভর্তি হয় মারাত্মক অবস্থা নিয়ে যখন চিকিৎসকদের করার কিছু থাকে না। বয়স্কদের মধ্যে আবার ডায়াবেটিস, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা বেশি থাকে। আবার অনেকে আছে হাসপাতালে আসার আগেই শক সিনড্রোম নিয়েই ভর্তি হয়। এসব রোগীকে সর্বাত্মক চেষ্টার পরও আগের মতো ফিরিয়ে আনা যায় না। আবার আমাদের হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ শয্যা কম। দেখা গেল একজন রোগীর আইসিইউ লাগবে জরুরি ভিত্তিতে, কিন্তু পর্যাপ্ত আইসিইউ না থাকায় রোগীটিকে এই অত্যাবশ্যক সেবাটি দেয়া যায় না। ফলে রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি প্রাণই আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি কিন্তু অনেক সময় আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে রোগী বাঁচাতে পারি না । ডা: সাব্বির বলেন, সামনের অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ থাকতে পারে এখনকার মতো। এখন ডেঙ্গু চিকিৎসার যে ব্যবস্থা আছে, এর সাথে আরো কিছু শয্যা, আইসিইউ এবং ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ব্রাজিলে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় কিন্তু সেখানে মৃত্যু আমাদের চেয়ে অনেক কম। আমরা আরো বেশি চেষ্টা করলে কিছু মৃত্যু হয়তো রোধ করতে পারব।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/779060