২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:২১

চলতি মাসে আগস্টের চেয়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি

এক দিনে আবারো ২১ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ৩০১৫

চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আগস্টের চেয়ে বেশি। এ মাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের চেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে চলতি মাসের ২০ দিনে সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২৭৪ জন। এর আগের মাসের ২০ দিনে দেশে ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যু হয়েছিল ২৫৫ জনের। অর্থাৎ এ মাসের ২০ দিনে ৪৯ জন বেশি মারা গেছে। অন্য দিকে চলতি মাসের গত ২০ দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ হাজার ২ জন। কিন্তু আগস্টের ২০ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ১৬২ জন। এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং মেডিসিনের চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু ভয়াবহতা সবাইকে অবাক করেছে। সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত নিয়ে জোরদার মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা। এতগুলো প্রাণ ঝরে পড়েছে মশার কামড়ে তা ভাবতেই কষ্ট লাগে। মশা নিধনে জোরদার কর্মসূচি থাকলে এতগুলো প্রাণ ঝরে পড়ত না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল জানিয়েছে, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ২১ জন এবং একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৫ জন। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত যে ২১ জন মারা গেছে ডেঙ্গুতে তাদের ১০ জন ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে ১১ জন। এ ছাড়া গতকালকে যে ৩ হাজার ১৫ নতুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে ঢাকায় ৮৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ২ হাজার ১৫৮ জন। চলতি মাসে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৩ হাজার ১১২ জন। একই সাথে সেদিন ডেঙ্গু জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছিল ১৮ জন। উল্লেখ্য, গত ৪ দিন ধরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন হাজারের বেশি পৌঁছে গেছে।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই রোগটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু আছে কিন্তু সেখানে নিয়ন্ত্রণেও আছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে ডেঙ্গু রোগী হয়ে থাকে ব্রাজিলে, কিন্তু তারা সফলতার সাথে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তবে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশের কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের উদাহরণ রয়েছে। তারা বিটিআই প্রয়োগ করে খুবই সফলতার সাথে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তিনি বলেন, তবে কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটি প্রশাসন ঢাকার চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় এবং তারা সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। ডা: জাবীন বলেন, মশক নিধনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলে মশক নিধন হবে না। আমাদের ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে যে জনপ্রতিনিধি রয়েছেন এবং বাইরেও যারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত তাদের এ কাজে জড়িত করতে হবে। এ কাজটা দ্রুত করতে না পারলে আমাদের এখান থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে না এবং মশা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডেঙ্গু রোগটিও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার ৪১০ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এটা কেবল যারা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ভর্তি হয়েছে তাদের। এর বাইরেও প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে, তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। তারা চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। তাদের মধ্যে যাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে তারাই কেবল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার সংখ্যা দেখানো সংখ্যার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণের মতো হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেও তথ্য সংগ্রহ করলে ডেঙ্গুর সংখ্যা আরো বাড়বে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/778817