২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:১২

পণ্যের মূল্যে আগুন

পণ্যের মূল্য যে বাড়ছে সেটা আদৌ নতুন খবর না হলেও সর্বশেষ কিছু খবর বেরিয়েছে যেগুলোকে ভীতিকর না বলে উপায় নেই। এরকম একটি খবরে জানানো হয়েছে, বেশি টাকা দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না, যার জন্য বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগী ও তাদের স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় এক খবরের পুনরাবৃত্তি করে জানানো হয়েছে, ভরা মৌসুমেও অত্যধিক দামের কারণে ইলিশের কাছে ঘেঁষতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এবার মৌসুমের শুরুতেই ইলিশ চলে গেছে তাদের নাগালের বাইরে। ফলে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা আর দীর্ঘশ্বাস ফেলার বাইরে কিছুই করতে পারছে না তারা।

এদিকে খোলা বাজারেও চলেছে দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের লোপাটের কার্যকম। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানানো হয়েছে, মুন্সিগঞ্জে হিমাগারেও আলু বিক্রি বন্ধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা সেই সাথে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দাম না বাড়ানো হলে আলু বিক্রি করা হবে না। বড়বাজার, মুন্সিরহাট, হাটলক্ষীগঞ্জ এবং মুক্তারপুরসহ মুন্সিগঞ্জের হাট-বাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো দোকানেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে না। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ আলু কেনার এবং খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খবর শুধু এটুকুই নয়। মুন্সিগঞ্জের প্রভাব পড়েছে সারাদেশের বাজারেই। কোথাও কোনো খোলা বাজারে আলু পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। প্রকাশিত খবরে বরং উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো খবরই জানানো হয়েছে।

গত শনিবার মুন্সিগঞ্জের হিমাগার পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এই মর্মে নির্দেশ দিয়ে এসেছেন যে, এখন থেকে পাকা রশিদে এবং নগদ অর্থে আলু বিক্রি করতে হবে। নির্দেশে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দরে খোলা বাজারে আলু বিক্রি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পাইকারি ও খোলা বাজারের কোথাও ওই নির্দেশ অনুযায়ী কেনা-বেচা করা হয়নি। এখনও হচ্ছে না। মাঝখান দিয়ে অমন নির্দেশের ফলে আলুর কেনা-বেচাই বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অভিযোগ করেছেন, নির্দেশের মাধ্যমে ভোক্তা অধিদফতরের হস্তক্ষেপ বরং আলুর ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেÑ যার পরিণতিতে সাধারণ মানুষকে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়তে হয়েছে।

ওদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলার পন্থা হিসেবে বগুড়াসহ আরো কিছু স্থানে হিমাগার পর্যায়েই খোলা বাজারের দরে অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ এবং ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের উপকার হলেও ক্ষিপ্ত হয়েছেন ভোক্তা অধিদফতরের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি বাজারে হানা দিয়ে আলু বিক্রেতাদের গ্রেফতার করেছেন। ফলে ওই সব বাজারে আবারও আলুর সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সারাদেশেই আলুকেন্দ্রিক পরিস্থিতির বিপদজনক অবনতি ঘটেছে এবং সরকার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে থাকবে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার একটি পন্থা হিসেবে ভোক্তা অধিদফতরের তৎপরতাকে সীমিত করা দরকার। নিজেদের চিন্তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে কর্তা ব্যক্তিদের উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা। তেমন ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। সরকারকে একই সঙ্গে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবেÑ কেবলই বর্তমান এবং নিকট ভবিষ্যতের কথা ভাবলে চলবে না।

https://www.dailysangram.info/post/535986