২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:১৯

মুন্সিগঞ্জে হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ, বগুড়ায় দাম বেশি

দাম বাড়ানো না হলে আলু বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

হিমাগার ও খুচরা পর্যায়ে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর পাঁচ দিন ধরে মুন্সিগঞ্জের অধিকাংশ হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ। দাম বাড়ানো না হলে আলু বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে বগুড়ায় হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে, তবে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে। এদিকে মুন্সিগঞ্জে হিমাগার থেকে আলু আনতে না পারায় সংকট দেখা দিয়েছে খুচরা বাজারে। নতুন করে সরকার নির্ধারিত দামে আলু কিনতে না পারায় খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি বাদ দিয়েছেন অনেক সবজি বিক্রেতা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মুন্সিগঞ্জের বড়বাজার, মুন্সিরহাট, হাটলক্ষ্মীগঞ্জ ও মুক্তারপুর এলাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরকার আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭ টাকা বেঁধে দেয়। তবে এই দাম মানেননি ব্যবসায়ীরা। হিমাগার পর্যায়ে ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

গত শনিবার মুন্সিগঞ্জে হিমাগার পরিদর্শনে যান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। হিমাগার পরিদর্শন শেষে রোববার থেকে পাকা রসিদের মাধ্যমে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন তিনি। তবে এ নির্দেশনা হিমাগার ও বাজার পর্যায়ের কোথাও বাস্তবায়ন হয়নি।

সবজি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে হিমাগারের মজুতদাররা আলু বিক্রি না করায় তাঁরা আলু কিনতে পারছেন না। বেশি দামে আলু কিনে আনলে খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবার জরিমানার মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই তাঁরা আলু কেনাবেচা বন্ধ রেখেছেন।

মুন্সিগঞ্জের কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. স্বপন বলেন, ‘আমরা মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে গিয়েছিলাম। সেখানে কেউ আলু বিক্রি করছেন না। খাবারের হোটেলসহ আমাদের অনেক নির্দিষ্ট ক্রেতা আছেন। তাঁদের এখন আলু দিতে না পারলে আমাদের কাছ থেকে ছুটে যেতে পারেন। তাই বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়ত থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। ভাড়াসহ ৪০ টাকা দাম পড়েছে। সে দামেই এখন আলু বিক্রি করছি।’

এ নিয়ে কথা হয় মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এ বি এম মিজানুল হকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিমাগার থেকে ব্যবসায়ীরা আলু ছাড়ছেন না, বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রির বিষয়ে কৃষি বিপণন অফিস, জেলা ভোক্তা অধিকার ও উপজেলা প্রশাসন সমন্বয় করে কাজ করছে। খুব শিগগির বাজার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসবে।’
হিমাগারে কর্মচাঞ্চল্য নেই

গতকাল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার নিপ্পন কোল্ডস্টোরেজ ও বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজে দেখা গেছে, তাদের আলুর শেড ফাঁকা পড়ে আছে। হিমাগারগুলোতে ব্যবসায়ীরা জটলা করে বসে অলস সময় পার করছেন। সেখানে কোনো ক্রেতা ছিলেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সব ব্যবসায়ীকে নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার আলুর দাম না বাড়ালে আগামী সাত দিন হিমাগারে কোনো আলু বিক্রি হবে না। আমরাও শেষটা দেখতে চাই।’

নিপ্পন কোল্ডস্টোরেজ এলাকায় মোরশেদ খান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা আলু বিক্রি করতে চাই। তবে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দামে নয়।’

হিমাগার তদারকি ও নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাফর রিপনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিফা খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে খুচরা ও হিমাগার পর্যায়ে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে বাজার ও হিমাগারগুলোতে তদারকি চলছে।

বগুড়ায় বাড়তি দামে বিক্রি
বগুড়ায় হিমাগার পর্যায়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। সাদা জাতের এক কেজি আলু হিমাগার পর্যায়েই ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল দুপুরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকায় আর অ্যান্ড আর পটেটো স্টোরেজ নামের একটি হিমাগার পরিদর্শনে এসেও অতিরিক্ত দরে আলু বিক্রির সত্যতা পান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এ সময় শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নের চাকলমা গ্রামের রিপন মিয়া (৩০), দেউলী ইউনিয়নের ভরিয়া গ্রামের শাহ আলম (৫৮) ও পিরব ইউনিয়নের দাইমোল্লা গ্রামের জাহিদ হাসান (২২) নামের তিন ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

পরে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে আলুর দাম ভোক্তা পর্যায়ে পেতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে

https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/qehr86xb90