২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:০৬

খুচরা বাজারে চা পাতার মূল্যে বিস্তর ফারাক

দুর্বল মনিটরিংকে দায়ী করলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চা নিলামে চলতি চা বর্ষের ২১তম নিলাম পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কমছে চা পাতার দাম। প্রতি কেজি চা পাতার গড় দাম সর্বোচ্চ আড়াই শ’ টাকা থেকে নামতে নামতে ১৮৫ টাকায় নেমেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক এই নিলামে বিক্রীত মূল্যের সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার তথা ভোক্তাপর্যায়ে চা পাতার দামের রয়েছে বিস্তর ফারাক। বাজারে প্যাকেটজাত হয়ে ভোক্তাদের তা কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি কোম্পানি ভেদে ৩৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া খোলা চা পাতাও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত। অভ্যন্তরীণ বাজারে চা পাতার দামের এমন নিয়ন্ত্রণহীনতার পেছনে সরকারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিলামে চা পাতার দাম নিম্নমুখী হলেও খুচরাপর্যায়ে প্যাকেটজাত চা বিক্রেতা কোম্পানিগুলো দাম কমাচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি তদারকি শূন্যের কোঠায় হওয়াতে দেশের সব শ্রেণীর মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি যেন গরিব মানুষের নাগালের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সোমবার মৌসুমের ২১তম চট্টগ্রাম চা নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। লিফ (দানাদার) এবং ডাস্ট (গুঁড়ো) উভয় ধরনের চা পাতার দাম ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন গতির। তা ছাড়া উন্নত জাতের ভালো চা পাতার বাজারচাহিদা স্থির থাকলেও দাম ছিল নিম্নমুখী। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চা পাতা বাজার থেকে প্রত্যাহার হচ্ছে প্রতিটি নিলামে। গুঁড়ো চা পাতার বাজারচাহিদা ভালো ছিল বলে ব্রোকারেজ হাউজগুলো জানায়।

সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের চট্টগ্রাম চা নিলামে ৪২ লাখ ৭০ হাজার ৮৯১ কেজি চা পাতা নিলামে ওঠে। এর মধ্যে লিফ (দানাদার) চা পাতা ছিল ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৩৮ কেজি এবং ডাস্ট (গুঁড়ো) চা পাতা ছিল ছয় লাখ ৭২ হাজার ২৫২ কেজি। সূত্র জানায়, লিফের মধ্যে মোটা দানার ব্রোকেন প্রজাতির ভালো চা পাতার দর ছিল প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২১৫ টাকা পর্যন্ত।

এ ছাড়া ভালো মানের ফেনিংস (ছোট দানা) চা পাতা প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২১২ টাকা পর্যন্ত নিলাম দর ছিল। ভালো লিকারের ফেনিংস চা পাতার বাজারচাহিদা থাকলেও নিম্নমানের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চা পাতা বিক্রি ছিল বেশ কষ্টসাধ্য।

এ দিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমের মধ্যে টানা ২১টি নিলামে প্রতি কেজি চা পাতার গড় দাম আড়াই শ’ টাকা পর্যন্ত ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। নিলাম মূল্যের সাথে ভোক্তাদের ক্রয়মূল্যের ব্যবধান বিস্তর।

দানাদার প্যাকেটজাত চা পাতা ভোক্তাদের প্রতি কেজি ৪০০ টাকা পর্যন্ত এবং গুঁড়ো চা পাতা টি ব্যাগ হিসেবে গড়ে প্রতি কেজি ৫০০ টাকার উপরে পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিলাম থেকে কিনে নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের ব্র্যান্ডে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করে চা পাতা। এর মধ্যে দানাদার চা পাতা ৫০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ব্র্যান্ড ভেদে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা দরে। ২০০ গ্রামের প্যাকেট হলে আনুপাতিক মূল্য আরো বেড়ে যায়। তবে পূর্ণ এক কেজির প্যাকেট নিলে দাম সামান্য কমে। অথচ প্রতি কেজিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) যোগ করে কোম্পানির বাজারজাত ব্যয় সর্বোচ্চ ১০ টাকা যোগ করলে কোনোক্রমেই প্রতি কেজি চা পাতা আড়াই শ’ থেকে ২৮০ টাকার উপরে হওয়ার কথা নয় বলে।

বেশ কয়েকজন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক এ প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারি কোনো তদারকি নেই। ফলে যে যার মতো দাম নিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নয়া দিগন্তকে জানায়, সরকারের তদারকির অভাবে সব শ্রেণীর মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় এই চা পাতার বাজারদর এখনো বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্যাকেটজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছে করলেই দাম কমাতে পারে। একমাত্র সরকারই চা পাতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষ চা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ভালোমানের চা পাতা নিলাম থেকে কিনতে হয় এবং সরবরাহ লাইন ঠিক রাখতে প্রচুর চা পাতা মজুদ রাখতে হয়। সে জন্য চা পাতার খুচরা বাজারদর ঠিকমতোই আছে দাবি করে তিনি বলেন, প্যাকেটের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা থাকে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/778556