২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১০:০২

ঝুঁকিতে টেকসই উন্নয়ন, প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ আজরা জেয়ার

এসডিজি সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। বৈশ্বিক এই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা এখন মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্ব নেতাদের আন্তরিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষের এই ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও জলবায়ু সঙ্কটের মারাত্মক ক্ষতি দূর করা সম্ভব নয়।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের শুরুতে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে শুরু হয়েছে দুই দিনের এসডিজি সামিট। এতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারি প্রতিনিধিদল ও টেকসই উন্নয়নের সাথে জড়িত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও অংশীজনেরা।

জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিশ্ব নেতাদের বলেছেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে বিশাল ফাঁক রয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য দোহা কর্মসূচির আওতায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমন্বিত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের জন্য দুর্ভিক্ষ এখন অতীতের বিষয়। মন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সবার বা সমগ্র সমাজের অংশগ্রহণে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে বাংলাদেশ।

এসডিজিকে বর্তমান সময়ের ‘ম্যাগনা কার্টা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিরসনে নানামুখী প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা দুর্ভিক্ষকে অতীতের বিষয় বানিয়েছি। তিনি বলেন, ২০২২ সালে দেশে চরম দারিদ্র্য হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০০৬ সালে ২৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।

মোমেন বলেন, তবে এসডিজি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে বিশাল ফাঁক রয়েছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য দোহা কর্মসূচির আওতায় অঙ্গীকার বাস্তবায়ন চাই। তিনি বলেন, অর্থায়ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য হলো, রেয়াতি ঋণ এবং জীবন রক্ষাকারী প্রযুক্তি এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম শর্তাদি আরোপ। সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত যাতে এসডিজিতে বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে পারে সেজন্য যথেষ্ট প্রণোদনা থাকা দরকার।

এ দিকে শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা এসডিজির বেশির ভাগ লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি খুব ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০৩০ সালের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা উদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে বিশ্ব যে বিপদের সম্মুখীন হবে সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তারা ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার জন্য একটি রাজনৈতিক ঘোষণাও গ্রহণ করেছে।

সশস্ত্র সঙ্ঘাত, প্রতিকূল জলবায়ু প্রভাব এবং কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবসহ বৈশ্বিক সঙ্কট ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য হুমকিস্বরূপ, এমন এক সঙ্কটময় সময়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সমবেত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের দ্বারা ১০ পৃষ্ঠার একটি নথি গৃহীত হয়েছে।

এসডিজি সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, এসডিজি শুধু একটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের তালিকা নয়। এটি বিশ্বের মানুষের আশা, স্বপ্ন, অধিকার এবং প্রত্যাশা বহন করে।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও এখনো ১.২ বিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে এবং বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ বা ৬৮০ মিলিয়ন মানুষ চলতি দশকের শেষ নাগাদ ক্ষুধার মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংখ্যাগুলো মেনে নিতে পারে না। তিনি বলেন, সমন্বিত, উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১২৪ মিলিয়ন অতিরিক্ত লোককে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব এবং প্রায় ১১৩ মিলিয়ন মানুষের অপুষ্টি আমরা দূর করতে পারি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঘোষণা এসডিজির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য একটি গেমচেঞ্জার হতে পারে।
২০১৫ সালে গৃহীত এসজিডির রাজনৈতিক ঘোষণায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এবং বার্ষিক কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেইসাথে একটি কার্যকর ঋণ-ত্রাণ ব্যবস্থাও এর সাথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের প্রধান ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, ক্ষুধা মানবতার ওপর একটি মর্মান্তিক দাগ এবং এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনও। তিনি বলেন, এটি আমাদের প্রত্যেকের কাছেই অস্বস্তিকর যে এই যুগে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে রয়েছে।

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে গতকাল এক বৈঠকে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাগিদ দিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের সাইড লাইনে এক বৈঠকে তিনি এ নিয়ে তাগিদ দেন।

আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য অব্যাহত মানবিক সহায়তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/778601